শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান
অবরোধে পর্যটকশূন্য বান্দরবান, মুখ থুবড়ে অর্থনীতির চাকা
হরতাল-অবরোধের কারণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে। পর্যটনের ভরা মৌসুমে মুখ থুবড়ে পড়েছে জেলার পর্যটননির্ভর অর্থনীতির চাকা। অবরোধের কারণে দূর পাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ফাঁকা জেলা সদরের সব আবাসিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট এবং সরকারি-বেসরকারি গেস্টহাউজগুলো। পর্যটন স্পট নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক, নীলগিরি, নীলদিগন্ত, শৈলপ্রপাতসহ দর্শনীয় স্থানগুলো সবই ফাঁকা। হরতাল-অবরোধের কারণে পর্যটনের ভরা মৌসুমে প্রত্যাশিত সংখ্যক পর্যটক পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ পর্যটন ব্যবসায়ীদের।
জানা যায়, নভেম্বর থেকে শীতের মাসগুলো পর্যটনের ভরা মৌসুম। তবে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বান্দরবানে পর্যটন খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিরোধী দলগুলো দেশব্যাপী হরতাল-অবরোধ দেওয়ায় সহিংসতার ভয়ে মানুষ ভ্রমণ করতে অনিচ্ছুক বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীরা। চলমান অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে তাদের লোকসান আগামীতে আরো বাড়বে বলে মনে করেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, পর্যটন খাতে ভাটা পড়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এতে আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চলমান অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে তাদের লোকসান আগামীতে আরো বাড়বে বলে মনে করেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তবে পর্যটন মৌসুমে স্থানগুলো হরতাল ও অবরোধের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পর্যটন মৌসুমের শুরুতে বড় ধরনের ধাক্কা খাচ্ছি। অবরোধের মধ্যে পর্যটক পাচ্ছি না। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য খরচ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। আগাম যেসব বুকিং ছিল সব বাতিল হয়ে যায়। পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে প্রায় কয়েক হাজার মানুষ জড়িত। এ অবস্থা চলতে থাকলে মারাত্মক ক্ষতিতে পড়বে ব্যবসায়ীরা।
- রাজনৈতিক কারণে বান্দরবানে পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত
- পর্যটক না থাকায় কিস্তি চালাতে পারছে না ব্যবসায়ীরা
এদিকে, শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল বলেন, তিন শতাধিক ট্যুরিস্ট গাড়ির পাঁচ শতাধিক শ্রমিক রয়েছে। তারা পর্যটকের ওপর নির্ভরশীল। অবরোধে পর্যটক না আসায় চালক শ্রমিকরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। অনেকে ঠিকমতো খেতে পর্যন্ত পারছে না।
পর্যটন ব্যবসায়ী নীলাম্বরী রিসোর্টের মালিক সাইদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ পাহাড়ের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় পর্যটনশিল্পে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে না হতেই রাজনৈতিক অস্থিরতায় পর্যটকদের আনাগোনা আবার থমকে গেছে। এ যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।
আবাসিক হোটেলের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, অধিকাংশ মালিকরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে হোটেল ব্যবসা গড়ে তুলেছেন। পর্যটক না থাকায় কিস্তি চালাতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। অনেকে কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছেন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ফারুক হোসেন বলেন, অবরোধে পর্যটকের সংখ্যা কম। তবে একদম ফাঁকা নয়, স্থানীয় ও আশপাশের ভ্রমণকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গাড়ি নিয়ে বাইরের ট্যুরিস্টরাও টুকটাক আসছে। তিনি আরো বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছে। পর্যটকরা নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করতে পারে।
পিডিএস/আরডি