চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

  ১৮ নভেম্বর, ২০২৩

নদীর তীরে পলিথিনের স্তূপ, ঝুঁকিতে স্বাস্থ ও পরিবেশ 

ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

দেড় যুগ আগে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে অবাধে। ব্যবহৃত পলিথিন ফেলা হচ্ছে যেখানে-সেখানে। আর এ সবের শেষ ঠিকানা হচ্ছে জেলার বিভিন্ন নদী-খাল-বিল। শহর ঘেঁষে বয়ে চলা মহানন্দা নদীর তীরে পলিথিনের স্তূপ জমেছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা নদীর পরিবেশ দূষণসহ ভরাট হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিনে।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নিষিদ্ধ হলেও থেমে নেই পলিথিনের বিক্রি ও ব্যবহার। বাধা দেয়ার কেউ নেই। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে মুদি দোকান, ফলের দোকান, কসমেটিকসের দোকানসহ জেলার সব বাজারেই চলছে প্রকাশ্যে পলিথিনের বিক্রি ও ব্যবহার। যেমন বিক্রেতারা বিক্রি করছেন বা বিভিন্ন মালামালের সঙ্গে দিচ্ছেন, তেমনি ক্রেতারাও কিনছেন বা নিচ্ছেন।

জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩টি নদী ও দশটিরও বেশি বড় বড় খাল রয়েছে। পলিথিনের ব্যবহার সহজলভ্য হওয়ায় প্যাকেটগুলো যত্রতত্র ফেলেন বাসিন্দারা। ফলে এসব সেচযোগ্য পয়েন্ট নিষিদ্ধ পলিথিনে ভরাট হয়। এসব নদী-খালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিতসহ ভরাট হয়েছে মহানন্দা নদী। ডাস্টবিনে না ফেলে বাড়ির উঠানে থাকা ড্রেনেই ময়লা-আর্বজনা ফেলেন মানুষজন। এর ফলে ড্রেনের পানিসহ পলিথিনের পরিত্যক্ত অংশ মহানন্দা নদীতে গিয়ে পড়ে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও বৃথা থেকে যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-শিবগঞ্জ ও রহনপুর পৌরসভা প্রশাসন ময়লা আবর্জনা দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। এর মধ্যে একটি পচনশীল অন্যটি অপচনশীল যোগ্য আর্বজনা। দুভাগে বিভক্তি করা এসব আর্বজনা দুটি রঙের ডাস্টবিনে রাখার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু কঠোর তদারকির অভাবে এমন উদ্যোগও ভেস্তে যেতে বসেছে।

আরো জানা গেছে, পলিথিন বাজারজাতকরণে পরিবহন সিন্ডিকেট নামে আরেকটি শক্তিশালী চক্র কাজ করছে। ঢাকাসহ দূরবর্তী কয়েকটি জেলা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিষিদ্ধ পলিথিন আসে। সাধারণত এসব পলিথিন মালবাহী ট্রেন, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আনা হয়। বাজারজাতের মাধ্যমে দোকানদার হয়ে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে। ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি পলিথিন নষ্ট করছে পরিবেশ। নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না হওয়ার জন্য আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা না থাকা, সরকারি দপ্তরের কঠোরতা না থাকাকে দায়ী করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও পরিবেশবাদীদের মতে, পলিথিন অপচনশীল পদার্থ হওয়ায় দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অবিকৃত অবস্থায় থেকে মাটিতে সূর্যালোক, পানি ও অন্যান্য উপাদান প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। পচে না বলে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায় ও উপকারী ব্যাকটেরিয়া বিস্তারে বাধা তৈরি করে। এছাড়া পলিথিন মোড়ানো গরম খাবার খেলে মানুষের ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ হতে পারে। পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করলে তাতে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয় যা দ্রুত পচনে সহায়তা করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাজারের একাধিক দোকানি জানিয়েছেন, এক কেজি পলিথিন ১৫০ টাকা। কখনও ১০-২০ টাকা কম-বেশি হয়। এক কেজিতে দুই থেকে ২৫০ পলিথিন থাকে। কিন্তু একই টাকায় যদি ঠোঙা কিনি, তবে তাতে ৭০-৮০টি থাকে। তাই পলিথিনে লাভ বেশি আমাদের।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, নিষিদ্ধ পলিথিন বাজারজাত বন্ধ করতে প্রতি মাসেই অভিযান পরিচালনা করা হয়। ক্ষতিকারক এ পণ্যটি ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে মানুষের ধারণা থাকলেও শুধু সদিচ্ছার অভাব আছে। যখনই তারা জেলার বাজারগুলোয় অভিযান চালাতে যান, পলিথিন যারা বিক্রি করে তাদের একাধিক প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়। পলিথিন বিক্রেতা ও ব্যবহারকারীদের প্রশ্ন নিষিদ্ধ এ পণ্যের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তাদের এ পথেই হাঁটতে হচ্ছে।

পিডিএস/এস

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চাঁপাইনবাবগঞ্জে,নিষিদ্ধ পলিথিন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close