ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগি, স্যালাইন-ওষুধের সংকট
ঠাকুরগাঁওয়ে ঘরে ঘরে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগি। জ্বর-সর্দি ও কাশিতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। হঠাৎ রোগির চাপ বাড়ায় হাসপাতালে দেখা দিয়েছে ওষুধ, স্যালাইন ও শয্যাসংকট। অপরদিকে চাহিদার তুলনায় হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ ও স্যালাইন না পেয়ে ক্ষোভ রোগি ও স্বজনদের। এমনই চিত্র দেখা গেছে জেলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, বৈশ্বিক আবহাওয়ার বিরূপ আচরণের প্রভাবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ঠান্ডাজনিত রোগ-জীবাণুর ধরন পরিবর্তন হয়েছে। এ কারণে শিশু, বৃদ্ধ নারী-পুরুষসহ আক্রান্ত হচ্ছে সব বয়সী মানুষ। এতে আতঙ্কিত না হয়ে সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরা ও পুষ্টিকর খাবার খেতে পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে গত শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ভর্তি ছিল ৫৩৮ জন রোগী। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ১৮০-১৮৫। তাদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৪৫ শয্যার ওয়ার্ড। এক বেডে ২-৩ জন করে শিশুকে থাকতে হচ্ছ। এর পাশাপাশি ওয়ার্ডের বারান্দা, চলাচলের পথেও শিশুদের রাখা হয়েছে। এক বেডে গাদাগাদি করে শিশুসহ স্বজনেরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মা-বাবা। এ ছাড়া অতিরিক্ত রোগীর কারণে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না স্বাস্থ্য সুরক্ষা।
জ্বর, সর্দিতে আক্রান্ত দুই মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা মুন্নি আক্তারের মা বলেন, ‘আগে হাসপাতাল থেকে যতটুকু ওষুধ পাওয়া যেত, এখন তা পাওয়া যাচ্ছে না। সেবিকারা বলেছেন ওষুধ বাইরে থেকে কিনে নিতে। তিন দিনে ১৫০০ টাকার ওষুধ কিনলাম।’
সোহেল নামের এক শিশুর অভিভাবক বলেন, ‘স্যালাইন ও ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হলো। হাসপাতালে থাকলেও যদি বাইরে ওষুধ কিনতে হয় তাহলে ভর্তি থেকে কী হবে, হামরা (আমরা) তো গরিব মাইনসী।’
শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ ফাতেমা বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন ৭০-৮০ জন শিশু ভর্তি হচ্ছে। এসব রোগীর জন্য যেসব ওষুধ হাসপাতাল থেকে ওয়ার্ডে সরবরাহ করা হয় তা দেওয়া হলেও চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। বাকিগুলো বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। কোনো ধরনের স্যালাইন সরবরাহ নাই।’
হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেজ্ঞ ডা. আবু মোহা. রাজিবুল দোযা বলেন, আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে শিশুদের শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। এতে তারা জ্বর, সর্দিসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদের জন্য এটি একটি দুর্যোগের সময়। জনবল কম থাকার পরও সেবা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ওষুধের কিছুটা সংকট রয়েছে।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রাকিবুল আলম বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ঠান্ডাবাহিত রোগের রূপ পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিদিন হাসপাতালে ৮০০ থেকে ১২০০ রোগি বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে। এর মধ্যে ৩০-৩৫ শতাংশ হাঁচি-কাশি ও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত।
ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বেশি থাকার কারণে মানুষের শরীরে পুষ্টির অভাব হচ্ছে। মানুষ পুষ্টিকর খাবার খেতে পারছে না। ফলে তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
পিডিএস/এস