সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
সিংগাইরে প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে একজনের মৃত্যুদণ্ড
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার গোলাইডাঙ্গা বাস্তা গ্রামে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এক নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ ও গলা কেটে হত্যার দায়ে রোকমান হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে আসামির উপস্থিতিতে এ রায় দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) বেগম তানিয়া কামাল।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো. রোকমান হোসেন ওরফে লোকমান মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বড় কালিয়াকৈর গ্রামের মো. আমোদ আলীর ছেলে।
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা যায়, নিহত ছমিরন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় তার বাবার বাড়িতে আলাদাভাবে বসবাস করতেন। তাকে চলাফেরায় সহায়তা করতেন তার বৃদ্ধ মা মোছা. নুরজাহান বেগম। প্রতিদিন রাতে বাইরে থেকে তালা দিয়ে রাখতেন তার মা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের ৫ তারিখ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ছমিরনের ছোট ভাইয়ের বউ সেবিকা আক্তার সুমি আত্মীয়স্বজনসহ বাস্তা আশ্রাফিয়া জামিয়াতুল মাদ্রাসায় ওয়াজ শুনতে যায়। প্রতিদিনের মতো তার মা রাত ৮টার দিকে ছমিরনকে ঘরে শুইয়ে রেখে বাহিরে তালা দেন। রাত পৌনে ১টার দিকে ওয়াজ শুনে বাড়িতে আসার পথে পশ্চিম পাশে ইটের সলিং রাস্তা দিয়ে রোকমানকে শরীরে রক্ত মাখা অবস্থায় দ্রুত হেটে যেতে দেখে সুমি বাড়িতে গিয়ে তার শাশুড়িকে বলেন তার নুনাস কোথায়। তার শাশুড়ি দ্রুত তালা খুলে ঘরে ঢুকে লাইট জালিয়ে চৌকির উপর ছমিরনের গলাকাটা মৃতদেহ দেখতে পান। সুমি সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় মেম্বার আ. মজিদ আলীকে ফোন করে তার নুনাসের হত্যাকাণ্ড ও লোকমানের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানায়। ঘটনার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরেই আ. মজিদ মেম্বারসহ এলাকার লোকজন লোকমানকে আটক করে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। তাদের বাড়ির উঠানে অনেক লোকের উপস্থিতিতে লোকমান স্বীকার করে তার নুনাস যে ঘরে থাকে তার পাশের রুমের দরজার শিকল খুলে ওই রুমে প্রবেশ করে আনুমানিক রাত ১০টার দিকে ছমিরনকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ছমিরন চিৎকার করতে থাকলে রান্না ঘর থেকে বটি দা এনে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এ.কে.এম. নূরুল হুদা রুবেল জানান, এ ঘটনায় ছমিরনের ভাইয়ের বউ মোছা. সেবিকা আক্তার সুমি ঘটনার পরের দিন ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের ৬ তারিখে বাদি হয়ে সিংগাইর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর আব্দুস সাত্তার মিয়া তদন্ত শেষে লোকমানকে অভিযুক্ত করে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের ১৮ তারিখে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। পরবর্তীতে ১৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার সংশিষ্টতা পাওয়ায় আসামি মো. রোকমান হোসেন ওরফে লোকমানকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ৯ (২) ধারায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। আসামিকে সাজা পরোয়ানাসহ জেল হাজতে প্রেরণ করার আদেশ দেওয়া হয়।
আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মো. শাহিনুর ইসলাম।
পিডিএস/এএমকে