বগুড়া প্রতিনিধি
বগুড়ায় আইনজীবী সহকারী নেতার মৃত্যু
বিকেলে ডিবির হাতে আটক, রাতে হাসপাতালে মৃত্যু
বগুড়ায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সদস্যদের হাতে আটকের পর হত্যা মামলার আসামি ও আইনজীবী সহকারী সমিতির নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) শহরের মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে পুলিশের নির্যাতনে হাবিবের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আইনজীবী সমিতির সদস্য ও তার স্বজনরা। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডিবি। এ ঘটনায় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বিকাল ৫টার দিকে আদালতের বাইরে থেকে হাবিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। পরে রাত পৌনে ৯টার দিকে শহরের মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
হাবিবুর রহমান জেলার শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বাবলুর ছেলে। তিনি জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। প্রায় দশ বছর আগে জেলার শাজাহানপুরে জোড়া গ্রামে বিপুল (১০) নামে এক শিশুকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় করা মামলায় তিনি প্রধান আসামি ছিলেন।
- পুলিশের নির্যাতনে হাবিবের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আইনজীবী সমিতির সদস্য ও তার স্বজনরা।
- ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ‘বুকে ব্যথা’ হলে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয়।
- হাবিবের মৃত্যুর ঘটনায় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন।
হাবিবের মামা বগুড়া বার সমিতির সদস্য মঞ্জুরুল হক জানান, হাবিব তার সহকারী ছিলেন। বিকাল ৫টার দিকে আদালত থেকে বের হওয়ার পর অপরিচিত একদল লোক তাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। রাত ৯টার দিকে হাবিব মারা গেছেন বলে শুনতে পান।
বগুড়া ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মোস্তাফিজ হাসান জানান, বিপুল হত্যা মামলায় শিশুটির সৎ মা খুকি বেগম অন্যতম সাক্ষী ছিলেন। গত ২ আগস্ট খুকি বেগমও হত্যার শিকার হন। বিপুল হত্যাকাণ্ডে আদালতে মামলাটির সাক্ষ্য দেওয়ার দিন ধার্য তারিখের আগেই এই ঘটনা ঘটে।
খুকির হত্যাকাণ্ডের পর প্রথমে একটি পা-বিহীন অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। এর এক মাস পর মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) প্রতিবেশী মনোয়ারা বেগমের বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতর থেকে খুকি বেগমের খণ্ডিত পা উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হলে খুকি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে হাবিবের জড়িত থাকার তথ্য দেন মনোয়ারা বেগম।
ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা মোস্তাফিজ হাসান বলেন, ‘প্রতিবেশী মনোয়ারা বেগমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বিকালে হাবিবকে আটক করা হয়। পরে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে মনোয়ারা বেগমের মুখোমুখি করা হলে হাবিবুর রহমান বুকে ব্যথার কথা বলেন। পরে তাকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।’
জানতে চাইলে বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, জিজ্ঞাসাবাদের সময় হত্যাকাণ্ডের প্রমাণগুলো উপস্থাপন করা হলে এক পর্যায়ে হাবিবুর রহমান অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত তাকে চিকিৎসা দেন, পরে সেখানে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
পিডিএস/আরডি