আরিফ খান, বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা)

  ০৩ অক্টোবর, ২০২৩

কাশিনাথপুর এসেই হারিয়ে গেছে আত্রাই

একসময়ের খরস্রোতা আত্রাই সাঁথিয়ার কাশিনাথপুর হাটের কাছে এসে বাধাগ্রস্ত। ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

** কাশিনাথপুর বাজারের কাছে ভরাট করায় আত্রাইয়ের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ আর নেই।

** প্রভাবশালীরা ইচ্ছেমত নদরি জায়গা দখলের মহোৎসবে মেতে উঠেছেন।

** দখলী জায়গার পরিমাণের সঠিক তথ্য নেই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে।

একসময়ের খরস্রোতা আত্রাই নদ পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর হাটের কাছে এসেই হারিয়ে গেছে। এখানেই থেমে গেছে আত্রাইয়ের চলার পথ। নদের এই অংশ দখল করে গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। এমনকি এসব স্থাপনায় নির্বিঘ্নে যাতায়াত ও ব্যবসা পরিচালনার জন্য নদের এপার-ওপার গড়ে তোলা হয়েছে চওড়া পাকা রাস্তা। সেই রাস্তারও দুপাশে গড়ে উঠেছে প্রচুর দোকানপাট। এতে এই স্থানে প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে নদীটির অস্তিত্বই একেবারেই বিলীন হয়ে গেছে।

আত্রাইয়ের উৎপত্তি সাঁথিয়ার নন্দনপুর ইউনিয়নে ইছামতী নদী থেকে। এরপর এটি সাঁথিয়া, বেড়া ও সুজানগর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বেড়া উপজেলার মাসুন্দিয়া ইউনিয়নে বাদাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে পদ্মায় গিয়ে মিশেছে। উপজেলার কাশিনাথপুর বাজারের কাছে এটিকে পুরোপুরি ভরাট করায় এর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ আর নেই। তবে নদীর উৎসস্থল থেকে মোহনা পর্যন্ত বাকি অংশ স্রোতহীন ও বদ্ধ জলাশয় অবস্থায় কোনোরকমে টিকে আছে। অথচ এলাকাবাসীর জানান, নব্বইয়ের দশকে এই নদ দিয়ে চলাচল করত বড় বড় নৌকা, হত নৌকা বাইচ। এখানে পাওয়া যেত ইলিশসহ নানা রকম সুস্বাদু মাছ।

সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাশিনাথপুরের অবস্থান পাবনার সাঁথিয়া, বেড়া ও সুজানগর উপজেলার সংযোগস্থলে। পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় ওই স্থানটি পাবনা জেলার অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত হয়ে উঠেছে। তবে দখলের স্থানসহ ব্যবসাকেন্দ্রের বেশির ভাগ অংশ পড়েছে সাঁথিয়া উপজেলার মধ্যে। জেলার অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত হওয়ার কারণে কাশীনাথপুর হাটের পার্শ্ববর্তী এলাকার জায়গার দাম আকাশচুম্বি হয়ে পড়েছে। এতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা লোভ সংবরণ করতে না পেরে নদীর জায়গা ইচ্ছেমত দখল করার মহোৎসবে মেতে উঠেছেন।

কাশিনাথপুর ট্রাফিক মোড় থেকে হাটের শেষ সীমানা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার দখলে নিয়ে নদীর দুই পাড় আবার কোথাও কোথাও পুরো অংশ জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবনসহ শতাধিক পাকা ও আধাপাকা স্থাপনা। বেশির ভাগ স্থাপনাতে রয়েছে দোকান, ক্লিনিকসহ বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। শতাধিক স্থাপনা হলেও দখলকারী ২৫-৩০ জন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দখল হওয়া অংশের মধ্যে কাশিনাথপুর হাটসংলগ্ন অংশে নদীর কোনো অস্তিত্ব নেই।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরো জানান, দখলের মহোৎসব শুরু হয় ২০০৩ সালের দিকে। ব্যবসায়ী আলামিন মিয়া জানান, নদীর পাড়ে থাকা তাদের নিজস্ব জমিতেই তারা দোকানপাট গড়েছেন। তবে কাশিনাথপুর মৌজা অংশে সামান্য কিছু সরকারি জায়গা তাদের দখলে থাকতে পারে। সরকারি নির্দেশ পাওয়া মাত্রই তারা সে অংশ ছেড়ে দেবেন।

নদীর ওপর নির্মাণ করা সড়কের দুপাশে যে দোকানগুলো গড়ে উঠেছে সেগুলোর চার-পাঁচটির ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দোকান ভাড়া নিয়ে তারা ব্যবসা করছেন। নদী দখল করে এগুলো গড়ে তোলা হয়েছে কি না সে ব্যাপারে তারা জানেন না। স্থানীয় কলেজের সহকারী প্রভাষক আলাউল হোসেন বলেন, দখলের কারণে স্রোতস্বিনী আত্রাই কাশিনাথপুরে এসে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।’

সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ হোসেন জানান, আত্রাই নদ রক্ষার ব্যাপারে আমাদের একাধিক সভা হয়েছে। ইতিমধ্যেই আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের যুক্ত করে এ ব্যাপারে ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছি।

পিডিএস/জেডকে

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পাবনা,সাঁথিয়া,আত্রাই,কাশিনাথপুর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close