মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

  ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষ

মিরসরাইয়ে রুমন হত্যায় ৮৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

প্রধান আসামি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির নুরুল আমিন চেয়ারম্যান

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে রায়হান হোসেন রুমন (১৬) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বিএনপির ৮৫ নেতাকর্মীর নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জোরারগঞ্জ থানায় বিএনপি নেতা নুরুল আমিন চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে ১৫ জন এজহার নামীয় ও ৭০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা (নং ২৩) দায়ের করেন তার মা খালেদা বেগম।

এ ঘটনায় সর্বশেষ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার বিকাল ৫টায় আজমপুর ঈদগাঁ মাঠে রায়হান হোসেন রুমনের প্রথম জানাজা ও সোনাপাহাড় এলাকায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

এর আগে শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার আজমপুর বাজার এলাকায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি নুরুল আমিন চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ওচমানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে রায়হান হোসেন রুমন নিহত হন। সে আজমপুর বাজারে সুফিয়ানের দোকানে মাছের ট্রাকের ড্রামে পানি ভর্তি করার কাজ করতো।

রুমনের মৃত্যু-পরবর্তীতে উপজেলা ছাত্রলীগ তাকে নিজেদের কর্মী দাবী করে শোকবার্তা দেয়। নিহত রুমন উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের সোনপাহাড় এলাকার মৃত নুরেরজামানের ছেলে। ছোটবেলা তারা থেকে ওচমানপুর ইউনিয়নের পাতাকোর্ট গ্রামে নানার বাড়িতে থাকতো।

শনিবার দুপুরে কথা হয় নিহত রুমনের নানা আবুল কালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে রুমন দুপুরের ভাত খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে দোকানে আসে। এরপর একটি মাছের গাড়িতে পানি দেয়। কিছু বোঝার আগেই আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিএনপির শতাধিককর্মী লাঠি নিয়ে ছাত্রলীগের ছেলেদের মারার জন্য দৌড়াতে থাকে। একজনকে মেরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে বলে আমি দোকানে বসে শুনেছি। পরবর্তীতে রুমনকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে পুকুরে খুঁজতে গেলে তার লাশ পাওয়া যায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘রুমনের বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা সন্তানদের নিয়ে আমার বাড়িতে চলে আসে। রুমন স্থানীয় ওচমানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার পর বিগত তিন বছর আর পড়ালেখা করেনি। তাকে আমি আমার পাশের দোকানদার সুফিয়ানের দোকানে চার হাজার টাকা বেতনে চাকরি ঠিক করে দিই।’

রায়হান হোসেন রুমনের মামা ইউনুস নূরী বলেন, ‘বিএনপি-ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় রুমন যে দোকানে কাজ করতো সেখানে ছাত্রলীগের এক কর্মী ডুকে যায়। পরবর্তীতে বিএনপি নেতারা দোকানে ডুকে তাকে মারতে গেলে ওই ছাত্রলীগ কর্মীর সঙ্গে রুমনও দৌড় দেয়। এ সময় বিএনপি নেতাদের লাঠির আঘাতে রুমনের মাথার পেছনে আঘাত লাগে। এক পর্যায়ে সে পাশের পুকুরে পড়ে যায়। এরপর তাকে আমরা পুকুর থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

ছেলের লাশ ধরে বিলাপ করতে করতে মা খালেদা বেগম বলেন, ‘ঘটনার দিন আসরের পরে সে বাড়ি থেকে বের হয়। আমার কলিজার ধনের সঙ্গে সেটাই ছিল শেষ দেখা। রুমনের বাবা মারা গেছে যে তখন আমার বড় ছেলে সুমনের তিন বছর বয়স, আমার মনা রুমনের বয়স তখন চার বছর, রুমন একদম ছোট ছিলো। তিন ছেলেকে বুকে আগলে ধরে বাপের বাড়িতে চলে আসছি। এখন আমার একটা মনা কোথায় গেলোরে। আমার ছেলের রক্তে হাসপাতাল, থানা লাল হয়ে গেছে। তাকে খুনের সঙ্গে জড়িতদের আমি বিচার চাই।’

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মিরসরাই সার্কেল) মনিরুল ইসলাম বলেন, বিএনপির সংঘর্ষে নিহত রায়হান হোসেন রুমনের মা খালেদা বেগম বাদী হয়ে ১৫ জন এজহার নামীয় ও ৭০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা (নং ২৩) দায়ের করেন। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে।

উল্লেখ্য আগামী ৫ অক্টোবর বিএনপির ১৫ দিনের কর্মসূচির মধ্যে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ উপলক্ষ্যে মিরসরাইয়ে একটি পথসভা করার কথা রয়েছে। তারই প্রস্তুতি হিসেবে শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম উত্তরজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান উপজেলার ৫ নম্বর ওচমানপুর ইউনিয়ন এলাকায় একটি সভা করেন।

প্রস্তুতি সভা শেষে বাড়ি যাওয়ার পথে আজমপুর এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ২০ জন আহত ও কিশোর রায়হান হাসান রুমন নিহত হন। এদিকে শুক্রবার বিকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেওয়া আহত ও নিহতের নামের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রারে নিহত রায়হান হোসেন রুমনের নাম ভুলবশত জাহেদ হাসান রুমন লিপিবদ্ধ হয়। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্তব্যরত চিকিৎসকের বক্তব্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছিলো। নিহতের প্রকৃত নাম রায়হান হোসেন রুমন হবে।

পিডিএস/এএমকে

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সংঘর্ষ,বিএনপি-আওয়ামী লীগ,মামলা,মিরসরাই
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close