মওদুদ আহম্মেদ, আক্কেলপুর (জয়পুরহাট)
আক্কেলপুর ইউএনওর স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে হেনস্তার শিকার নারী, সন্তান নিয়ে রাস্তায় অনশন
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলামের স্ত্রীর মর্যাদার দাবি করে কার্যালয়ের সামনের সড়কে অনশন করেছেন জিনাত আরা খাতুন কলি নামের এক নারী। ঘটনাটি বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে ঘটেছে। এ সময় প্রায় আধাঘণ্টা সড়কে যানচলাচল বিঘ্নিত হয়। পরে তাকে লোকজন দিয়ে নিজ কার্যালয়ে নিয়ে যান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তবে ইউএনও বলছেন, তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে।
অনশনে বসা নারীর দাবি, তিনি ইউএনও আরিফুল ইসলামের বিবাহিতা স্ত্রী। তার একটি শিশু ছেলে রয়েছে। বর্তমানে তিনি দিনাজপুরের একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ইউএনওর কার্যালয়ের সামনের রাস্তার মাঝে বসে পড়েন জিনাত আরা খাতুন কলি। ইউএনওর স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে সদরের প্রধান সড়কে সব যানবাহন অবরোধ করেন তিনি।
পিডিএস/আরডি
জিনাত আরা খাতুন জানান, আক্কেলপুরের বর্তমান ইউএনও আরিফুল ইসলাম এর আগে দিনাজপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখন একটি জমি খারিজ করতে গিয়ে তার (আরিফুল) সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয়। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে ২০২১ সালে রংপুরের একটি রেস্ট হাউসে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
জিনাত আরা অভিযোগ করেন, বিবাহের বিষয়টি প্রথম থেকেই কৌশলে গোপন করেন আরিফুল। এমনকি তিনি গর্ভবতী হলেও গর্ভপাতে বাধ্য করেন তার স্বামী। অবশ্য পরে তাদের সংসারে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। তবে পরে জিনাত আরা খাতুনকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান আরিফুল।
জিনাত আরা জানান, স্ত্রীর মর্যাদা পেতে বুধবার দুপুরে আক্কেলপুরের বর্তমান ইউএনও মো. আরিফুল ইসলামের বাংলোতে সাথে দেখা করার চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে আসা পরিবারের সদস্যদের হেনস্তার পর বাইরে বের করে দেন নিরাপত্তা কর্মী আনসার সদস্যরা। তখন তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ইউএনও। এর কারণে বিকেলে কার্যালয়ের সামনে প্রধান সড়কের যানবাহন আটকে অনশন শুরু করেন। পরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম আকন্দের উপস্থিতিতে স্থানীয় কয়েকজন তাকে টেনে হিচরে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান তাকে সুবিচার পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এতেও সমাধান না হলে আইনের দ্বারস্থ হবেন বলে তিনি জানান।
জিনাত আরার ভাই মুক্তার হোসেন বলেন, ‘প্রথম স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আরিফুল ইসলাম আমার বোনকে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। পরে তিনি বিষয়টি গোপন করে। তিনি তার শিশু সন্তান এবং স্ত্রীকে মর্যাদা দিতে অস্বীকৃতি জানান। আমার বোনের স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে এখানে এলে তিনি আমাদের হেনস্তা করেছেন।’ জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম আকন্দ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে বসেছি। আইন মোতাবেক শান্তিপূর্ণ সমাধান করা হবে’।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এটি প্রথম আমি আপনার কাছে শুনলাম। আমাকে ব্ল্যাক মেইল করে ট্র্যাপে ফেলার একটি বিষয় ছিল। তাকে (জিনাত আরা) তালাক দেওয়া হয়েছে। আইনের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হবে। এটি একটি পারিবারিক বিষয়।’