জুয়েল রানা লিটন, নোয়াখালী
নোয়াখালীতে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারির দুই মাসেও নেই গ্রেপ্তার
বাদীর পরিবারের সংবাদ সম্মেলন
নোয়াখালীর সদর উপজেলার কালাদরাপ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার ২ মাসেও গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। এখন মামলা তুলে নিতে বাদীর পরিবারকে নানা হুমকি দিচ্ছে তার লোক। এ অভিযোগ তুলে ওই ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার ও তার হামলা থেকে রক্ষার আকুতি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক ভুক্তভোগী পরিবার। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে জেলা শহরের গোদার মসজিদ এলাকায় একটি পত্রিকার স্থানীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগী মো. জহিরুল ইসলাম। এসময় তার মা আয়েশা খাতুন, স্ত্রী মারজাহান বেগম, ছেলে আবুল কালাম, মেয়ে ফাহিমা আক্তারসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মামলার বাদি হয়েও আসামি ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। মামলা তুলে নিতে তারা আমার বাড়িঘরে বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়ে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে। এখন লাশ গুম করার হুমকি দিয়ে আসছে।’
জহিরুল ইসলাম সদর উপজেলার কালাদরাপ ইউনিয়নের চুলডগি গ্রামের আলী আহম্মদের ছেলে। তিনি ইটভাটায় শ্রমিক সরবরাহের কাজ করেন বলে জানা গেছে।লিখিত বক্তব্যে জহিরুল ইসলাম বলেন, তিনি কুমিল্লার বিভিন্ন ইটভাটায় শ্রমিক সরবরাহের কাজ করতেন। ২০১৭ সালে আলী আশরাফ ইটভাটায় (এ জি এস) ২৫ জন শ্রমিক সরবরাহের চুক্তিতে ১০ লাখ টাকা নেন। কিন্তু হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওই ভাটায় শ্রমিক সরবরাহ করতে পারেননি। পরে কোম্পানির টাকা ফেরত দিতে এজিএস কোম্পানীর সঙ্গে স্থানীয় কালাদরাপ ইউপি কার্যালয়ে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠক হয়। বৈঠকে এ জি এস কোম্পানির প্রাপ্য ১০ লাখ টাকা ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের মাধ্যমে পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত হয়। নির্দেশ অনুযায়ি তিনি বিভিন্ন তারিখে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের কাছে কোম্পানির ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা জমা দেন। বাকি ২০ হাজার টাকা চেক ও স্ট্যাম্প ফেরত নেওয়ার সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
জহিরুল ইসলাম বলেন, তার দেওয়া ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা এজিএস কোম্পানীকে না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। পরে ওই টাকার জন্য এজিএস কোম্পানি মামলা করলে তার (জহিরুল) সঙ্গে সমঝোতা করে চেয়ারম্যান মিজানুর সেই মামলা থেকে মুক্তি পান।
এদিকে পরে মিজান চেয়ারম্যানের কাছে প্রাপ্য টাকা ফের চাইলে লোকজন দিয়ে হামলা চালিয়ে জহিরুল ও তার স্ত্রীকে পিটিয়ে আহত করে। ওই ঘটনায় আদালতে মিজানুর রহমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালতে অর্থ আত্মসাৎ ও হামলার ঘটনায় মামলা করেন জহিরুল। মামলার অধিক শুনানী শেষে ওই মামলায় মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে গত ১৭ জুলাই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।সেই সঙ্গে সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আসামি গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু পরোয়ানার ২ মাস অতিবাহিত হলেও আসামিকে গ্রেপ্তার করছেন না সুধারাম থানা-পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে ও মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলাম। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।