দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর
মেহেরপুরের গাংনী
দখলে নালায় পরিণত কাজলা নদী, নাব্য সংকটে গোচারণ ভূমি

- দখল উচ্ছেদ করে পুনঃখনের দাবি নদী পাড়ের বাসিন্দাদের।
- এক সময় কলকাতার বাণিজ্যিক কেন্দ্রের সঙ্গে যাতায়াতের পথ ছিল নদীটি।
মেহেরপুরের গাংনীতে প্রভাবশালীদের দখলের কবলে পড়ে এক সময়ের খরস্রোতা কাজলা নদী নালায় পরিণত হচ্ছে। দীর্ঘদিন খনন না করায় নদীতে পলি পড়ে নাব্য কমেছে। তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় ভরা মৌসুমেও অধিকাংশ স্থানে পানি নেই। মরা কাজলা এখন গবাদিপশুর চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। পুনঃখনন করা গেলে কাজলা নদী ফের কৃষি ও মৎস্যজীবীদের জন্য আশীর্বাদে রূপান্তরিত হবে বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
গাংনী উপজেলার বড় নদী মাথাভাঙ্গা। এই নদীর কাজিপুর ইউনিয়নের অংশে উৎপত্তি হওয়া কাজলার বিস্তৃতি ত্রিশ কিলোমিটার জুড়ে। উৎপত্তিস্থল থেকে কাজলা নদী হিন্দা মাঠ, নওয়াপাড়া, ভাটপাড়া, গাড়াডোব ও সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রাম হয়ে ভৈরব নদে মিশেছে। কাজলা নদী গঙ্গার শাখা নদী ভারতের জলঙ্গীর সঙ্গে সংযুক্ত। ফলে একসময় বর্ষা মৌসুমে পানিতে কানায় কানায় ভরে থাকত কাজলা। বছর জুড়ে কোটি টাকার মাছ পাওয়া যেত। তবে ভাটপাড়া অংশের দুই কিলোমিটার এলাকা ছাড়া পুরো নদী এখন মৃতপ্রায়। সরেজমিনে দেখা গেছে, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের কাজলা নদীর ওপর নির্মিত সেতুর দক্ষিণ অংশে চর জেগে উঠেছে। সেখানে এখন গবাদিপশু চড়ে বেড়ায়। তবে উত্তর অংশে ২০০ গজের মতো এলাকায় হাঁটু পানি।
নদী পাড়ের বাসিন্দা রহমত আলী বলেন, এই কাজলার বুকে এক সময় বড় বড় নৌকা পাট বোঝাই করে কলকাতার মোকামে (আড়ৎ) বাজারজাত করা হতো। তখন যোগাযোগ মাধ্যমই ছিল এই নদী পথ। নদীর গাড়াডোব অংশে দেখা যায়, নদীর দুই পাড় কেটে সমতল করেছে প্রভাবশালী দখলদাররা। সেখানে চাষ হচ্ছে রবি শষ্য। গাড়াডোব গ্রামের আজিজুল হক মাস্টার বলেন, কাজলা একটি ঐতিহাসিক নদী। কাজলা হয়েই কলকাতার সঙ্গে পানি পথে এ অঞ্চলের যোগাযোগ মাধ্যম ছিল। ইংরেজ বণিকরা এই নদী দিয়ে এ দেশে যাতায়াত করত। কাজলা নদীর তীরেই ভাটপাড়া নীল কুঠি প্রতিষ্ঠিত হয়। একসময় এই নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রচুর পরিমাণে দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু এসব আজ অতীত, মেহেরপুরের ইতিহাসের বইয়ের পাতায় বিষয়।
এদিকে কাজলা নদীর এমন দুর্দশার মধ্যেই আশার আলো দেখাচ্ছে ভাটপাড়া ইকোপার্ক। গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া নীলকুঠিতে ২০১৩ সালে ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠার সময় পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে নদীর দেড় কিলোমিটার অংশ পুনঃখনন করা হয়। ফলে এ অংশে এখন সারা বছরই পানি থাকে। পুনঃখনন করা অংশে ছোট নৌকায় ভ্রমণ করেন দর্শনার্থীরা। বাকি অংশও পুনঃখনন করা গেলে স্থানীয় কৃষি ও মৎস্যজীবীদের জন্য এই নদী ফের আশীর্বাদে রূপান্তরিত হবে বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গাংনী উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মাহবুবুল হক মন্টু বলেন, ‘পুনঃখনন না হওয়ায় কাজলা নদীটি মৃতপ্রায়। নদীর প্রাণ ফেরাতে পুনঃখনন জরুরি। নদীপাড়ের স্থানীয় প্রভাবশালীরা দুই পাড় দখল করে চাষাবাদ করায় নদীটি সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। দখলদারদের উচ্ছেদ করা না গেলে নদীটি বিলীন হয়ে যাবে।’
মেহেরপুর-২ গাংনী আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, ‘সংসদে কাজলা নদীর খনন কাজের জন্য একটি প্রস্তাবণা উত্থাপন করা হয়েছে। আশা করা যায়, অতিসত্ত্বর দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে নদীটির পুনঃখনন শুরু হবে।’