বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রজনন ক্ষমতা কমে গেছে রোমিও-জুলিয়েটের
সুন্দরবনের নোনা পানির কুমির রক্ষায় করমজলে তৈরি করা হয় কুমির প্রজননকেন্দ্র। চার বছর ধরে সুন্দরবনের করমজল প্রজননকেন্দ্রে কুমির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এজন্য সেখানকার কুমিরের বয়স আর মেদ বাড়াকে দায়ী করছে বন বিভাগ।
সুন্দরবনের নোনা পানির কুমির বিলুপ্তির শঙ্কায় ২৩ বছর আগে গড়ে ওঠে করমজল কুমির প্রজননকেন্দ্র। পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের এ চার বছরে এখানে কুমির থেকে কোনো ডিম আসেনি। যে কারণে বাচ্চাও হয়নি। সম্ভবত কুমিরের বয়স হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। তবে কুমিরের প্রজনন ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে করমজলের ভেতরে আরেকটি পুকুরে আরো ছয়টি নতুন কুমির ছাড়া হয়েছে। যার বয়স ৭ থেকে ৮ বছর হয়েছে। এ ছয়টির মধ্যে দুটি পুরুষ এবং চারটি নারী কুমির রয়েছে। এগুলা ১৪-১৫ বছর হয়ে গেলে ডিম পাওয়া যাবে।
বর্তমানে করমজলে ১০০টি কুমিরের বাচ্চা রয়েছে। দুটি মা কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল এবং পুরুষ কুমির রোমিও। এদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে কেন্দ্রটি। ডিম থেকে বাচ্চা এবং তা লালন পালন করে কিছুটা বড় হলে ছেড়ে দেওয়া হয় নদীতে। তবে রোমিও-জুলিয়েট আর পিলপিলের এখন বয়স হয়েছে। কমে গেছে প্রজনন ক্ষমতা। যাতে প্রভাব পড়েছে উৎপাদনে। বন বিভাগ বলছে, কেন্দ্রের অপ্রাপ্ত কুমিরে প্রজননক্ষমতা হতে সময় লাগবে ১২ বছর। তখন ডিম পাড়া শুরু করলে কুমিরের বাচ্চা পাওয়া যাবে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় সিডরে ভেসে গেছে ৭৫টি কুমির। এছাড়া বনের চিতা বিড়াল মেরে ফেলেছে ৬২টি বাচ্চা। খাদ্যে পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। তবে প্রজনন বাড়াতে পারলে করমজল থেকে কুমির রপ্তানির সম্ভাবনা বাড়তে পারে। সূত্র আরো জানায়, সুন্দরবনের দুবলারচরে ১৯৯৭ সালে লবণ-পানি প্রজাতির কুমির ধরা পড়ার পর স্বপ্ন দেখা শুরু করে সুন্দরবন বিভাগ। তারা তখন কুমিরের বংশ বৃদ্ধির প্রাথমিক কাজ শুরু করে। এরপর ২০০২ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে ৮ একর বনাঞ্চলে কুমির প্রজননকেন্দ্র চালু করে। বন বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত এ প্রজননকেন্দ্রের জন্য সেসময় ব্যয় ধরা হয় ২৩ লাখ টাকা।
বন কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, ২০০২ সালে প্রজননকেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিক যাত্র শুরু করলেও বাচ্চা দেয় তিন বছর পর ২০০৫ সালে। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সুপার সাইক্লোন সিডরে এ কেন্দ্রের ৭৫টি কুমিরকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এরই মধ্যে ২০৬টি বড় কুমিরের বাচ্চা সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে দুই রাতে এ প্রজননকেন্দ্রের শেডের নেট ভেঙে একটি চিতা বিড়াল ৬২টি কুমিরের বাচ্চা মেরে ফেলে ও খেয়ে ফেলে। এরপরের বছর করমজল কেন্দ্রের দুটি মা কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল ৯১টি ডিম পাড়লেও তা থেকে একটিও বাচ্চা ফোটেনি।