রুহুল আমিন রিপন, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ)

  ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ঈশ্বরগঞ্জের নওপাড়া গ্রাম

‘খালি নিজের জান ও পোলাপাইনডি লইয়া বাইর অইছি’

চার ভাইয়ের পরিবারের সদস্য ৩০ জন। আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে তারা। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

চার ভাইয়ের বসতভিটার সাতটি ঘরের কোনো চিহ্ন নেই, সবখানে ছড়িয়ে আছে ছাই। এক কোণায় পড়ে রয়েছে আধাপোড়া চালসহ গৃহস্থালীর কিছু জিনিস। তার পাশে ছিটিয়ে রয়েছে দশ থেকে হাজার টাকার বেশ কিছু ঝলসানো নোট, বাকিগুলো পুড়ে ভস্ম। চারভাই মিলে পালন করা দেশি-বিদেশিজাতের ২০টি গরুর মধ্যে ৮টিই পুড়ে মরে গেছে। বাকি গরুগুলোর অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

নিজেদের পোড়া ঘরের ভিটায় বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন চার ভাই সালাম (৫৪), শহীদ(৫৫), হেলাল (৪৮), গিয়াস উদ্দিন (৬৫) সহ তাদের পরিবার। এখন কোথায় মাথা গুঁজবেন, কী করে তাদের দিন চলবে তার ঠিক নেই।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে আগুনে পুড়ে গেছে তাদের সব কিছু। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের উজানচর নওপাড়া গ্রামে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।

চার ভাইয়ের পরিবারের সদস্য ৩০ জন। আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে তারা।

হেলাল মিয়া বলেন, ‘সারা দিনের কাজ শেষে সব ভাই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ১২টার দিকে পোড়া গন্ধ পেয়ে তিনি উঁকি দিয়ে দেখি, পাশে বড় ভাই গিয়াস উদ্দিনের ঘরের এক পাশে আগুন জ্বলছে। মুহূর্তেই সেই আগুন বাকি ঘরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।’ চিৎকার শুনে লোকজন ছুটে এলেও চারটি বসতঘরসহ চার ভাইয়ের যৌথ খামারের গোয়ালঘর পুড়ে যায়।

আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে মাথায় হাত চার ভাইয়ের। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

হেলাল মিয়া জানান, ভাইদের সবাই ২০টি গরু পালনের ওপর নির্ভরশীল। গোয়াল ঘরের আগুন নিভানোর আগেই সব গরুই দ্বগ্ধ হয়। এর মধ্যে ৮টি গরু পুড়ে মরে গেছে। বাকিগুলোর অবস্থাও ভালো না।

ক্ষতিগ্রস্থ আরেক ভাই মো. শহীদ মিয়া জানান, ধারদেনা করে গরু কিনে লালন-পালনের পর বাজারে বিক্রি করেন। এর লভ্যাংশ ভাইয়েরা ভাগ করে নেন। দশ বছর ধরে এভাবেই চলছে তাদের। এর মধ্যে গাভীর দুধ বিক্রি করা হতো। খামারের একটি ষাড়ের সর্বোচ্চ মূল্য রয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। এখন সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব প্রায়।

শহীদ মিয়া বলেন, বুধবার ৬০ হাজার টাকায় একটি গরু বিক্রি করেন। তার কাছে থাকা সেই টাকার সঙ্গে কিছু যোগ করে আরেকটি গরু কিনার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু আগুনে সেই নগদ টাকাসহ ঘরে থাকা টাকা, স্বর্ণালংকার পুড়ে গেছে।

সালামের স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪০) জানান, ২০ বছর ধরে তিল তিল করে জমানো তার সব সঞ্চয় ও গৃহস্থালী জিনিসপত্র মাত্র আধা ঘণ্টার আগুনে পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘চোখের সামনে সব শেষ অইতাছে, কিন্তু কিচ্ছু করতে পারছি না। খালি নিজের জান ও পোলাপাইনডি লইয়া বাইর অইছি।’ এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

জানা গেছে, বৈদ্যুতিক মিটার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের একটি দল উপজেলার উজানচর নওপাড়া গ্রামে পৌঁছে। ততক্ষণে বাড়ির সব কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ বিষয়ে মোছা. হাফিজা জেসমিন বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে একজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের সহয়তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঈশ্বরগঞ্জের নওপাড়া,আগুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close