reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

পাটের দরে হতাশ চাষি

ছবি : সংগৃহীত

এবার পাটের আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা। তাপপ্রবাহ, অনাবৃষ্টি ও জাগ দেওয়ার পানি না পেয়ে শুরু থেকেই ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাদের। সার, কীটনাশকের দাম ও শ্রমিক মজুরি বাড়তি থাকায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। কিন্তু বাজারে পাটের যে দাম তা দিয়ে তাদের উৎপাদন খরচও উঠে আসছে না। ফলে পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ফরিদপুর : পাটের আবাদের দিক দিয়ে দেশের দ্বিতীয় ফরিদপুর। এ বছর বৈরী আবহাওয়া সত্ত্বেও পাটের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু পাটের দাম মণপ্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কমে যাওয়ায় চাষিরা হতাশ। কৃষকরা জানান, পাট বিক্রি করে লাভ তো দূরে থাক খরচই উঠছে না।

সালথার পাটচাষি আক্কাস আলী বলেন, এলাকাভেদে এক বিঘা জমিতে পাট চাষের জন্য জমি উপযোগী করাসহ খরচ হয়েছে ২৩ থেকে ২৪ হাজার টাকা। সালথার পাটচাষি রবিউল শেখ বলেন, গত বছর বিঘাপ্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। এবার প্রতি বিঘায় লোকসান হচ্ছে কমপক্ষে ৭ হাজার টাকা।

মধুখালী উপজেলার পাটচাষি পরিমল ম-ল বলেন, আগামীতে পাট চাষ করব কিনা ভাবছি।

বোয়ালমারীর চাষি আমির আলী ও চর শেখর গ্রামের চাষি দাউদ মোল্লা বলেন, পানির অভাবে ভালোভাবে কৃষক পাট জাগ দিতে পারেনি। যার কারণে পাটের রং ভালো হয়নি। পাটের দাম নেই। এবার পাট চাষ করে লোকসান হয়েছে।

পাট ব্যবসায়ী কাজী আরিফ বলেন, বর্তমানে জুটমিলগুলোতে পাটের চাহিদা কম তাই দামও কম। ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা। সালথা বাজারের পাট ব্যবসায়ী আবু তালেব বলেন, এখন পর্যন্ত ভালো মানের পাট ২৬০০ থেকে ২৭০০ টাকা, মাঝারি মানেরটা ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বোয়ালমারীর সাতৈর বাজারের বড় পাট ব্যবসায়ী আতিয়ার রহমান বলেন, এবার পাটের মান ভালো হয়নি। পাটকলগুলো এখন পর্যন্ত ক্রয় শুরু করেনি। এ কারণে বিভিন্ন হাট থেকে অল্প অল্প করে কিনছি।

ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এ সমস্যা সামনে হয়তো থাকবে না। ঠিক হয়ে যাবে।

কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) : পাটচাষে লাভের গুড়েবালি। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে পাট চাষ করে ধরা খেয়েছেন অনেক চাষি। কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন এবং সারা বছর কীভাবে সংসার চালাবেন এ নিয়ে তাদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজ। পাটকে এখন গলার ফাঁস মনে করছেন।

১ বিঘা জমিতে পাটের ফলন হয় ৭ থেকে ৮ মণ। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১৬ হাজার টাকার ওপরে। প্রতি মণ পাটের উৎপাদন খরচ হয়েছে ২ হাজার টাকার মতো। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ পাট মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। এ অবস্থায় পাটে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।

বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি পশ্চিম পাড়া গ্রামের বর্গাচাষি ফয়জুল হোসেন জানান, তিনি ২ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে পাটের চাষ করেন। ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩১ হাজার টাকা। ফলন পেয়েছেন ১৪ মণ। যা বর্তমান বাজার দাম ২৪ থেকে ২৬ হাজার টাকা। ৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের সরকার পাড়া গ্রামের পাটচাষি মুকুল হোসেন বলেন, গত বছর ভালো দাম পেয়ে এবার ১ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। ফলন হয়েছে ৮ মণ। হঠাৎ দরপতনে চাষের খরচ উঠছে না। পাটের বাজার যদি ৪ হাজার টাকা হতো তাহলে লাভবান হতাম।

উপজেলার বড়ব্রিজ পাড়ের পাট ব্যবসায়ী লেবু মিয়া বলেন, ব্যবসায়ীরা পাট না কেনায় বাজার কম। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, বাজারে কিছুটা মন্দাভাব চলছে। হয়তো কিছু দিন গেলে এ রকম থাকবে না।

শালিখা (মাগুরা) : মাগুরার শালিখায় প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মহাজনরা কম মূল্য দিচ্ছে তাই আমরাও কমমূল্যে ক্রয় করছি। এদিকে পাটচাষি বলছেন, সিন্ডিকেটদের প্রভাবে কমে গেছে পাটের দাম।

আড়পাডা ইউনিয়নের দিঘী গ্রামের পাটচাষি অছিউদ্দিন মোল্যা বলেন, পাট বোনা থেকে জাগ দেওয়া ও শুকানো পর্যন্ত যে খরচ হয়েছে, মণপ্রতি ২৫০০ টাকা দরে বিক্রি করলে সেই খরচ উঠবে।

বরইচারা গ্রামের পাটচাষি উৎপল বিশ্বাস বলেন, এভাবে দাম কমে যাবে, আগে জানলে পাট বুনতাম না। প্রতি হাটে পাটের দাম মণ প্রতি ২০০ টাকা কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন পাটচাষিরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ৩৯৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে যা গত বছরের চেয়ে ১৫ হেক্টর বেশি। যেখানে ফলন হয়েছে হেক্টরপ্রতি ১৫ বেল। গত বছরের চেয়ে এ বছর ফলন তুলনামূলক কম হয়েছে বলেও জানান তারা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
হতাশ চাষি,পাটের দর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close