গোলাম রসুল, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা)
বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
চৌদ্দগ্রামে আ.লীগের দুপক্ষে সংঘর্ষ ভাংচুর উত্তেজনা
উভয়পক্ষের মোট ২৫ জন আহত

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের অনুসারীদের সঙ্গে তার বিরোধী পক্ষের অনুসারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সকাল ৯টায় থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে। এসময় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়।
সংঘর্ষ চলাকালে সংসদ সদস্যের স্থানীয় কার্যালয় এবং সমর্থকদের সভা মঞ্চ, বেশ কয়েকটি দোকান ও দুটি ক্লিনিক ভাংচুর করা হয়। এসময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় সড়কে ৩ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। কুমিল্লা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে দুপুর ১টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণনাশের হুমকি এবং বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে গণজমায়েত ও প্রতিবাদ সভা উভয় পক্ষ চৌদ্দগ্রামে একই স্থানে ঘোষণা করে। এই নিয়ে গত ৩দিন ধরে চৌদ্দগ্রামে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সংসদ সদস্য মুজিবুল হক অনুসারীরা মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম বাজারে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে মঞ্চ তৈরি করে জড়ো হতে থাকে। একই সময় সংসদ সদস্যের বিরোধী পক্ষ সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মিজানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা পার্শ্ববর্তী হায়দার শপিং কমপ্লেক্সের সামনে জড়ো হতে থাকে। এ সময় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষ পুরো চৌদ্দগ্রাম বাজার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংসদ অনুসারীদের মঞ্চ ও সংসদের স্থানীয় কার্যালয় ভাংচুর করা হয়। মারমুখী একটি পক্ষ কয়েকটি দোকান ও দুটি ক্লিনিকে ভাংচুর চালায়। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে উভয়ে দিকে প্রায় ২০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। বেলা ১০টার দিকে সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বিরোধী সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান, আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি উপকমিটির সদস্য এম তমিজ উদ্দিন ভূঁইয়া সেলিম, জেলা যুবলীগ নেতা ও শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ জালাল মজুমদার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা এসএএম শাহীন মজুমদারসহ নেতাদের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা পরিষদ থেকে চৌদ্দগ্রাম বাজারের দিকে অগ্রসর হয়। এই নেতারা সংসদ সদস্যের বিরোধী পক্ষ। তাদের মিছিলটি প্রবেশের চেষ্টা করলে সংঘর্ষ আরো তীব্র হয়ে উঠে। এসময় মহাসড়কে বেশ কিছু যানবাহন ভাংচুর হয় ও তিনটি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষে আহত হয়ে সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন বাতিসা ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল আলম ফরহাদ, যুবলীগ নেতা আবুল হাশেম মজুমদার, লিমন চৌধুরী, পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা এনাম, শ্রমিক লীগ নেতা হানিফ, পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মনসুর আজাদ, যুবলীগ নেতা ফরাশউদ্দিন রিপন, পৌর এলাকার গোমারবাড়ী গ্রামের আবুল কালামের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (২০), নোয়াপাড়ার বজলুর রহমানের ছেলে শাহাদাত হোসেন (২৫), বৈদ্দেরখীল এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে শাহীন (১৬), একই গ্রামের সাদেক ড্রাইভারের ছেলে এনামুল হক (৩৩), গোমারবাড়ীর ছোটন মজুমদারের ছেলে আরাফাত সানি (২০), সেনেরখীল গ্রামের মো. স্বপনের ছেলে সাকিল (৩০), বাতিসার পাড়াগ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে সজীব (২১), লক্ষ্মীপুর গ্রামের সফিকুর রহমানের ছেলে মনির হোসেন (৩৭), নুরুল ইসলাম ড্রাইভারের ছেলে হানিফ (৩৩), পৌর এলাকার কমলপুর গ্রামের সামির হোসেন (২৩), রামরায় গ্রামের জুয়েল (২৬) পাঁচরা গ্রামের মিশু (২২) ও গোমারবাড়ী গ্রামের জাহিদ (২৩)। সংঘর্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন।
সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য এবং প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে আমাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে এমপি সাহেবের লোকজন হামলা করে। এতে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়।’
সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ রহমত উল্লাহ বাবুল বলেন, ‘ওরা আমাদের মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করেছে। জামায়াত-বিএনপির এজেন্টরা এই কাজ করেছে।’ চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট সার্কেলের এএসপি মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, দু’পক্ষেরই পূর্বে নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। এতে সকালে দু’পক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ উভয় পক্ষকে শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উভয় পক্ষের ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় কিছু কর্মী সমর্থক আহত হয়েছে। পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।