লালমনিরহাট প্রতিনিধি

  ০৫ জুন, ২০২৩

বোরকা পরায় শিক্ষার্থীকে কটূক্তি, ক্লাস বর্জন ও সড়ক অবরোধ

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

লালমনিরহাটের পূর্ব সাপটানা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে বোরকা পরায় কটূক্তি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে কম্পিউটার শিক্ষক ফেরদৌস আলীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ঘরোয়াভাবে সালিশে মীমাংসার চেষ্টা করা হলে উত্তেজিত হয়ে উঠেন এলাকাবাসী।

সোমবার (৫ জুন) বেলা ১২টার দিকে ওই শিক্ষকের বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে সড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ করেছেন। তাদের আন্দেলনের মুখে তাৎক্ষণিক তদন্ত কমিটি করে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে শিক্ষার্থীদের শান্ত করা হয়। পরস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় জরুরি মিটিং ডেকে স্কুল ছুটি দেন প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সভাপতি।

জানা যায়, পূর্ব সাপ্টানা উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক ফেরদৌস আলী ওই শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করতেন। মেয়েটি বোরকা পরে স্কুলে আসায় শিক্ষক ফেরদৌস তাকে বোরকা না পরেই স্কুলে আসতে বলেন। তিনি বলেন, ‘তুমি দেখতে এমনিতেই সুন্দর, তোমাকে বোরকা পরে আসতে হবে না।’ এরপরও বুধবার ওই ছাত্রী বোরকা পরে স্কুলে আসেন। এতে ওই শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে ক্লাসে গিয়ে মেয়েটিকে বলেন, ‘তুমি বোরকা পড়ে আস কেন? তখন ওই শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করলে শিক্ষক ফেরদৌস তাকে অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন। পরে মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বিষয়টা প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম সরওয়ারকে জানান। প্রধান শিক্ষক ওই শিক্ষকের বিচার করবেন বলে বিষয়টা আর কাউকে না বলার জন্য তাকে বুঝিয়ে চলে যেতে বলেন। এরপর দুদিন পেরিয়ে গেলেও ওই শিক্ষকের কোনো বিচার না করায় মেয়েটি স্কুলের সভাপতি শফিকুল ইসলামকে বিষয়টি জানান। তিনিও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন বলে আর কাউকে না বলার জন্য অনুরোধ করেন।

প্রধান শিক্ষক গোলাম সরওয়ার ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শফিকুল ইসলামকে জানালেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় অসহায় মেয়েটি বাধ্য হয়ে তার পরিবারকে জানান। কোনো কাজ না হওয়ায় সোমবার ১২টার দিকে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে রাস্তায় নেমে সড়ক অবরোধ করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে তাৎক্ষণিক প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি সফিকুল ইসলাম একটি কমিটি করে ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে বলে আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যান।

পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে গোপনে স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যোগসাজসে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সালিশ বৈঠক করে এবং মেয়ের পরিবারকে বিভিন্ন হুমকি ধমকি দেওয়া হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে সোমবার দুপুরে স্কুলে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়।

এ ব্যাপারে পূর্ব সাপটানা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম সরওয়ার বলেন, কম্পিউটার শিক্ষক একজন ছাত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছে বিষয়টি তিনি জেনেছেন। মেয়েটি অভিযোগ করায় ওই শিক্ষক তার বাড়িতে গিয়ে মাফ চেয়ে আসেন। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে আমরা জরুরি মিটিং ডেকেছি। মিটিংয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই শিক্ষক তো ক্ষমা চেয়েছেন। এখানে আর কি করা লাগবে। আমরা প্রতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবস্থা নেব।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জান্নাত আরা ফেরদৌস বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল বারী বলেন, ওই শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। এটি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। খোঁজখবর নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ক্লাস বর্জন,সড়ক অবরোধ,বোরকা পরায় কটূক্তি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close