প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৫ জুন, ২০২৩

গরমে অস্বস্তি চরমে

গরমে ফাঁকা হয়ে পড়েছে বরগুনার আমতলী উপজেলা শহরের সড়ক

দেশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে তীব্র তাপ প্রবাহ চলছে। এটি আগামী পাঁচ থেকে ছয় দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। স্বস্তি নেই কোথাও। মেহেরপুরে গত সোমবার এক যুবক হিটস্ট্রোকে মারাও গেছেন। তাপদাহে শুধু জনজীবনই না প্রাণীকূলও কাহিল হয়ে পড়েছে। খরতাপে পাখিদের মধ্যেও বেড়েছে অস্বস্তি।

রবিবার (৪ জুন) আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, নওগাঁ, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল বিভাগসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং মৌলভীবাজার, চাঁদপুর ও নোয়াখালী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় রাজশাহীতে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রাজধানী ঢাকায় ছিল ৩৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে মেহেরপুরে রীতিমতো মরুভূমির আবহাওয়া বিরাজ করছে। বৃষ্টির অভাবে মাঠঘাট শুকিয়ে যাচ্ছে। গরম বাতাস জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বাড়তে থাকা খরতাপে দেখা দিচ্ছে পানিশূন্যতা। কৃষক রহিম উদ্দীন জানান, চারণভূমি না থাকার কারণে বিলপাড়ে গরু চরাতে এসেছেন। তাপদাহের কারণে জলাশয়ে নেমে পড়েছে গরু। তাদের আর উপরে আনা যাচ্ছে না।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের সুপার জমির মো. হাসিবুর সাত্তার জানান, তাপদাহের কারণে পানিশূন্যতা দেখা দিচ্ছে। রোগিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার জন্য। বাইরে বের হলে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করতে হবে। মাঠে ঘাটে কর্মরত মানুষকে মাথায় মাথাল দিতে হবে রোদ থেকে রক্ষা পেতে।

বৃষ্টির দেখা নেই পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়ও। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৩৮ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা বিরাজ করছে। সকাল থেকেই শুরু হয় গরম হাওয়া। বেলা গড়ালে একটু একটু করে বাড়তে থাকে সূর্যের তাপ। জনশূন্য হয়ে পড়ে গ্রামীণ জনপদ। আগুন ঝরা রোদ থেকে বাঁচতে মানুষ ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে। তাতেও নেই একটু স্বস্তির বাতাস। প্রচণ্ড গরমে বন্ধ হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের কাজ। গরমে ক্লান্তি দূর করতে কেউ ডাবের পানি পান করছেন, কেউ কেউ খাচ্ছেন লেবুর শরবত আর ঠান্ডা পানি।

মহিপুরের ব্যবসায়ী শাহরিয়ার সুমন জানান, গত কয়েক দিন ধরেই সন্ধ্যার দিকে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। আসছে প্রায় এক ঘণ্টা পর। এ ঘটনা একবার নয়। সন্ধ্যার পর কয়েকবার আধা ঘণ্টা করেও বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে। দীর্ঘদিন এ ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট না হওয়ার কারণে ভোগান্তি বেশি হচ্ছে। ডালবুগঞ্জ ইউপি সদস্য শিরিন আক্তার বলেন, বিদ্যুৎ চলে গেলে অতিরিক্ত গরমের কারণে খুব কষ্ট হয়। আবার বাচ্চাদের লেখাপড়া করাতে কষ্ট হয়, বিদ্যুৎ চলে গেলে তারা আর পড়তে চায় না।

রবিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। দিনভর আবহাওয়া কেমন থাকবে তা নিয়ে পূর্বাভাসে জানানো হয়, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

একই অবস্থা বরগুনার আমতলীতেও। রোদে পুড়ছে প্রকৃতি, স্বস্তি নেই কোথাও। সূর্যের তার এতটাই প্রখর যে, বাইরে বের হলেই মনে হচ্ছে আগুনে জ্বলছে প্রকৃতি। অতিরিক্ত গরমে আমতলীসহ উপকূলীয় এলাকায় জনজীবন যেন গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। দেখা দিচ্ছে জ্বর, সর্দি, কাশির প্রাদুর্ভাব।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, বরগুনার আমতলীসহ উপকূলীয় এলাকা ও দেশের বিভিন্ন জেলা, বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা আগামী কয়েকদিন এ তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়াও বায়ু মণ্ডলে জলীয় বাষ্প বেশি ও বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় গরম এতো বেশি অনুভূত হচ্ছে।

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আমতলী উপজেলা,গরম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close