রাজাপুর (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি

  ০৪ জুন, ২০২৩

ঝালকাঠিতে পেয়ারা চাষ

বৃষ্টির অভাবে ঝরে গেছে ফুল, ফলন নিয়ে শঙ্কা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ঝালকাঠির বাগানের গাছ থেকে ঝরে পড়েছে পেয়ারা ফুলে। এতে এ বছর পেয়ারার আশানুরূপ ফলন না পাওয়ার শঙ্কায় আছেন চাষিরা। তবে যে পরিমাণ ফুল রয়েছে, তা সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে মনে করছে ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

দেশের প্রায় সবখানে পেয়ারার কম-বেশি চাষ হলেও ঝালকাঠি সদর ও পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির আশপাশেই বাণিজ্যিকভাবে এর অধিক চাষ হয়। ঝালকাঠির ১৩টি গ্রামে ৩৫০ হেক্টর ও স্বরূপকাঠির ২৬টি গ্রামে ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়। এসব এলাকার হাজারো মানুষের প্রধান জীবিকা পেয়ারা চাষ। আষাঢ়-শ্রাবণে পূর্ণ বর্ষাকালে এসব এলাকার নদী-নালার ধারে পেয়ারাগাছে ফল দেখা যায়।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, ২০২২ সালে কমপক্ষে ১ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমি বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষ হয়। সেই সময় প্রায় ২০ হাজার টন পেয়ারা তোলা হয়েছে। কিন্তু চলতি বছর ফলন কম হওয়ায় ১০ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদন হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

তবে ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির অভাবে ফুলগুলো কিছুটা বিবর্ণ হয়ে গেছে। তবে যা আছে, তা সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার ১৩টি গ্রামে পেয়ার চাষ হয়। এর মধ্যে কীর্তিপাশা, ভিমরুলি, শতসকাঠি, খাজুরিয়া, ডুমুরিয়া, কাপুরকাঠি, জগদীশপুর, মিরকাঠি, শাখাগাছির, হিমানন্দকাঠি, আদাকাঠি, রামপুর, শিমুলেশ্বর গ্রামে যুগ যুগ ধরে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষ হচ্ছে।

পেয়ারাচাষিরা জানিয়েছেন, এবার গাছের ফুল দেরিতে এসেছে। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় সেই ফুলও ঝরে পড়েছে। পেয়ারা মাঝামাঝি পাকা অবস্থায়ও মুকুল থাকে। এটি বিক্রয়যোগ্য হতে আরো এক মাস সময় লাগবে। তাই বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।

কৃষক পঙ্কজ বড়াল জানান, মাঘ-ফাল্গুন মাসে পেয়ারাগাছের গোড়া পরিষ্কার করে সার দিতে হয়। এরপর, আমি ভেজা মাটি দিয়ে স্টাম্প ঢেকে দিলাম। প্রতিটি গাছের গোড়ায় গড়ে তিন শতাধিক টাকা খরচ হয়েছে। এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় ঝরে পেয়ারাগাছে যে পরিমাণ ফুল এসেছে তা হারিয়ে গেছে। লাভ তো দূরের কথা, প্রকৃত খরচ উঠবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

কৃষক দেবব্রত হালদার বিট্টু জানান, পেয়ারা আমাদের মৌসুমি আয়ের একমাত্র উৎস। পানির ওপর ভাসমান বাজারে বছরে লাখ লাখ টাকার লেনদেন হয়। বিক্রেতারা কিছু অস্থায়ী দোকান স্থাপন করেন, পর্যটক-দর্শনার্থীদের বিনোদন ও ক্ষুধা নিবারণের মাধ্যমে ব্যবসা করে লাভবান হন। কিন্তু এ বছর পেয়ারার ফলন কম হওয়ায় পাইকারিসহ সবকিছুর ওপর খারাপ প্রভাব পড়বে।

পর্যটন ব্যবসায়ী নিশীথ হালদার জানান, পেয়ারা মৌসুমে দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটক আসেন। আগে শুধু সমুদ্রপথে আসতেন, এখন রাস্তা ভালো হওয়ায় এবং অল্প সময়ে যাতায়াত সম্ভব হওয়ায় গত বছর থেকে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এ বছর পেয়ারার ফলন খুব বেশি পর্যটক বা দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করবে বলে মনে হয় না। পেয়ারার ফলন কম হওয়ায় চারদিক থেকে লোকসানের মুখে পড়বে এখানকার মানুষ।

পেয়ারাচাষি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ভবেন হালদার বলেন, কৃষি ফলনের জন্য সবচেয়ে উপকারী স্বাভাবিক পরিমাণ বৃষ্টি। তবে এ বছর পেয়ারাগাছের সঠিক পরিচর্যা করা হলেও বৃষ্টির অভাবে ঝড়ে বেশির ভাগ ফুলই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন পেয়ারাগাছে যে মুকুল আছে তাতে খরচ পোষানোই দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ঝালকাঠি সদর উপজেলার ১৩টি গ্রামে ৩৫০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারার চাষ হয়। পেয়ারার মৌসুমে এই এলাকার হাজার হাজার মানুষের অর্থনৈতিক স্বস্তি ও জীবিকার উৎস এই ফল। তাদের সরকারি প্রণোদণার সার ও বীজ কৃষকদের মধ্যে সমানভাবে বিতরণ করা হচ্ছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঝালকাঠি,পেয়ারা চাষ,ঝরে গেছে ফুল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close