আহমেদ রেজওয়ান, ফেনী
মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা, সোনাগাজী উপকূলের জেলেদের দুর্বিষহ জীবন
ইলিশসহ নানা জাতের মাছ সংরক্ষণে গত ২০ মে থেকে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে নদী, সমুদ্র ও সাগরের মোহনায়। তাই জাল ফেলা নিষেধ জেলেদের। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার ১৫ দিনেও সরকারি সহায়তার চাল না পেয়ে সোনাগাজী উপকূলের জেলে পরিবারে চলছে মানবেতর জীবনযাপন। জীবিকার তাগিদে অনেকে আবার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতের আঁধারে যাচ্ছে সাগরে। আবার পেটের দায়ে কেউ নিচ্ছে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার আশ্বাস সরকারি বরাদ্দ পেলে তা দ্রুত দেওয়া হবে নিবন্ধিত জেলে পরিবারদের।
সোনাগাজী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় রয়েছে ১ হাজার ৯৯৭ জন নিবন্ধিত জেলে পরিবার। এর মধ্যে কার্ডধারী জেলের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন। মাছের প্রজনন মৌসুমে উপজেলার নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে মাত্র ৩৪৫ জেলে পরিবারকে সরকারিভাবে সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার ১৫ দিনেও কোনো বরাদ্দ আসেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার চর দরবেশ, চর চান্দিয়া, সোনাগাজী সদর ও আমিরাবাদ ইউনিয়নে প্রায় দুই হাজার জেলে পরিবার রয়েছে। সরকারি কোনো সহায়তা না পেয়ে জেলারা কষ্টে দিন পার করছেন। অনেকে আবার পেটের দায়ে রাতের আঁধারে নদী ও সমুদ্রে গিয়ে মাছ শিকার করে সূর্য ওঠার আগেই তীরে ফিরে এসে মাছগুলো আড়তদার ও ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাদের মধ্যে ধরা পড়ে কেউ কেউ শাস্তির আওতায় আসছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সামুদ্রিক মাছের প্রজনন নিরাপদ করার জন্য মৎস্য বিভাগ মাছ ধরার ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ সময় নদী ও সমুদ্রের মাছ ধরা, বেচাকেনা, পরিবহন, মজুদ ও বিনিময় করা যাবে না। এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থেকে কাজ করছে। প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে এ ৬৫ দিন নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকার জন্য জেলেদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
উপজেলার চর খোন্দকার জেলেপাড়ার জেলে প্রিয়লাল জলদাস জানান, নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় অনেক কষ্টে তাদের জীবিকা নির্বাহ চলছে। কেউ কেউ বিভিন্ন সড়কের পাশে জলাশয় ও পুকুর থেকে মাছ ধরে বিক্রি করে পরিবারের খাবার জোগাড়ের ব্যবস্থা করছেন। অনেক জেলে বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। মাছ ধরতে না পারায় ঋণের টাকাও পরিশোধ করতে পারছেন না।
সোনাগাজী উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলন বলেন, নিবন্ধিত জেলেদের সরকারিভাবে বরাদ্দের চাল পাওয়া মাত্রই বিতরণ করা হবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তূর্য সাহা বলেন, সোনাগাজী উপজেলায় দুই হাজার নিবন্ধিত জেলে পরিবার রয়েছে। প্রথম দফায় সরকারি বরাদ্দ পেলে নিবন্ধিত ৩৪৫ পরিবারের মধ্যে ৫৬ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। দ্বিতীয় দফায় আরো ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। বরাদ্দ পাওয়া চাল ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। এর বাইরে অন্য ছেলেদের জন্যও সাহায্য পেতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে।