এইচ আর তুহিন, যশোর
খুলনা বিভাগে পশুর হাট হবে ক্যাশলেস
যশোরসহ খুলনা বিভাগের আট জেলায় এবার কোরবানির ঈদ ঘিরে পশুর হাট ‘ক্যাশলেস’ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাংকগুলো খামারিদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক পশুর হাটগুলোতে ডিজিটাল লেনদেন চালু করতে প্রাণিসম্পদ বিভাগ এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাংকগুলোকে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে চিঠি দেয়।
জালনোট, ছিনতাই ও বিভিন্ন প্রতারণা প্রতিরোধে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল লেনদেনে ক্রেতা-বিক্রেতাদের খরচ গুনতে হবে না। অন্য জেলাগুলো হচ্ছে কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, নড়াইল ও সাতক্ষীরা।
যশোরে ইস্টার্ন ব্যাংক (ইবিএল) ও মিউচুয়াল ব্যাংক কাজ করবে। গত কোরবানির ঈদ ঘিরে যশোর জেলায় ২৪টি অনুমোদিত পশুর হাট ছিল। সবগুলোই ‘ক্যাশলেস’ হবে কি না তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। আবার হাটের নামও উল্লেখ করা হয়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্ধেকের বেশি পশুর হাট ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ কার্যক্রমের আওতায় থাকবে।
সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির পশুর হাটে নগদ অর্থের চাহিদা বেড়ে যায়। টাকা নিয়ে পশু কিনতে এসে কখনো কখনো ছিনতাই ও প্রতারণার শিকার হন সাধারণ মানুষ। আবার বিক্রেতারাও জালনোটের কারণে পড়েন বিপাকে। এ অবস্থায় দেশের বিভিন্ন জেলায় পশুর হাটগুলোতে ডিজিটাল লেনদেন চালু করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত পশুর হাট করতে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ চিঠির অনুলিপি এছেসে যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে। চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রাশেদুল হক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদারের স্বাক্ষর করা চিঠিতে বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশুর হাটে নগদ অর্থের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এতে ব্যাংকগুলোর পক্ষে অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করা দুরূহ হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ ও পশু বিক্রেতারা জালনোট, ছিনতাই ও বিভিন্ন প্রতারণার শিকার হন। এ অবস্থায় ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ কার্যক্রমের আওতায় তৃণমূলপর্যায়ের পশুর হাটগুলো আনা হবে।
ওই চিঠিতে বলা হয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কৌশল অনুসারে জনগণের সব লেনদেনের প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজড করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ‘ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেমের’ আওতায় আনার জন্য চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ কার্যক্রম হাতে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কার্যক্রমের আওতায় চলতি বছরের কোরবানির পশুর হাটে বেচাকেনার জন্য দেশের কিছু স্থানে হাটের লেনদেন বাংলা কুইক রেসপন্স (কিউআর) কোডসহ অন্যান্য স্মার্ট মাধ্যমে ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে কেনাবেচার পাশাপাশি হাসিলের অর্থও ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন করার পরিকল্পনা আছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
ইস্টার্ন ব্যাংকের যশোর শাখার ব্যবস্থাপক আবদুল হক জানান, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পেয়েছি। রবিবার (২৮ মে) ঢাকা থেকে দুজন কর্মকর্তা আসেন আমাদের প্রশিক্ষণের জন্য। এরপর প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহযোগিতায় খামারি ও পশু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে। ক্যাশলেস লেনদেনে ক্রেতা-বিক্রেতারা উপকৃত হবেন বলে আশা করছি।’
যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রাশেদুল হক জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয় ৩ মে। এরপর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাসহ জেলাপর্যায়ে কোরবানির ঈদ ঘিরে পশুর হাট ‘ক্যাশলেস’ করার ব্যাপারে চিঠি পাঠিয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা পশু খামারিদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেছি।
তিনি আরো জানান, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এটিএম মেশিন থেকে টাকা তুলে বিক্রেতাকে পশুর মূল্য পরিশোধ করা যাবে। পাশাপশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও মূল্য পরিশোধ করা যাবে। হাটগুলোতে ডিজিটাল লেনদেন করলে বাড়তি খরচ হবে না। কার্ড ব্যবহারে কোনো চার্জ নেওয়া হবে না। আবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা তুলতে ক্যাশ আউটে খরচ থাকবে না।