উজ্জ্বল নাথ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম)

  ২৬ মে, ২০২৩

চার তিথিতে হালদায় ডিম ছাড়েনি মা মাছ

হালদা নদী থেকে ডিম আহরণের জন্য প্রস্তুত নৌকা। ছবিটি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মাছুয়াঘোনা স্লুইসগেট-সংলগ্ন এলাকা থেকে তোলা- উজ্জ্বল নাথ

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়া নিয়ে ডিম আহরণকারীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিন বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলেও নদীতে ঢলের প্রকোপ না থাকায় মা মাছ ডিম ছাড়েনি। তবে ডিমের আলামত হিসেবে আংশিক নমুনা ছেড়েছে মা মাছ।

জানা গেছে, বাংলা বছরের চৈত্র মাসের অমাবস্যা অষ্টমী কিংবা পূর্ণিমা তিথিতে মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। কিন্তু এ বছর চৈত্র মাসে বজ্রসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়নি। বাংলা বছরের শেষ মাসে নদীতে ডিম না ছাড়লেও বৈশাখ মাসের কোনো তিথিতে হয়তো ডিম ছাড়বে বলে ধারণা ছিল আহরণকারীদের। এ মাসেও চারটি তিথি চলে গেলেও মা মাছের ডিম ছাড়ার কোনো আলামত দেখা যায়নি।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং ঘূর্ণিঝড় মোখার আগ থেকে নদীর পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ না পেয়ে বৈশাখ মাসেও ডিম ছাড়েনি। চৈত্র ও বৈশাখ মাসের তিথি চলে গেলে ডিম আহরণকারীরা মনে করেছিলেন জৈষ্ঠ্য মাসের প্রথমে অমাবস্যা তিথিতে মাছ ডিম ছাড়বে। ঘূর্ণিঝড় মোখার রেশ না কাটতেই বজ্রসহ বৃষ্টিপাত দেখে ডিম আহরণকারীদের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু নদীর লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়া এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া, পাহাড়ি ঢলের প্রকোপ না থাকায় ডিম ছাড়েনি মাছ। ডিম আহরণকারীরা গত কয়েক দিন বজ্রসহ বৃষ্টির আলামত দেখে ডিম সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে নদীতে প্রস্তুত ছিল। বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ডিম আহরণকারীরা নদী থেকে ফিরে আসেন। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢলের প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে নদীর লবণাক্ততা কমে যাবে। সেই সময় হয়তো অমাবস্যা তিথির মধ্যে ডিম ছাড়ার আশা করছেন আহরণকারীরা। যদি অমাবস্যা তিথির মধ্যে নদীতে ডিম না ছাড়ে আগামী পূর্ণিমা তিথিতে বজ্রসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে লবণাক্ততা হ্রাস পাবে। তাহলে জুন মাসে (১ থেকে ৬ জুন) নদীতে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আর এ তিথিতে ডিম না ছাড়ে পরবর্তী অমাবস্যা তিথিতে (১৫ থেকে ২০ জুন) ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে লবণাক্ততাসহ অন্যান্য প্যারামিটারসমূহ আদর্শ মানের মধ্যে ফিরে আসলে এবং অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে হালদায় ডিম ছাড়বে কার্পজাতীয় মা মাছ। তবে অনুকূল পরিবেশ না পেলে অর্থাৎ পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হলে পরবর্তী জুন মাসের পূর্ণিমা তিথি (১ থেকে ৬ জুন) অথবা সর্বশেষ (১৫ থেকে ২০ জুন) অমাবস্যা তিথিতে কার্পজাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়বে। হালদা নদী বাংলাদেশের মিঠাপানির মাছের একটি গুরুত্বপূর্ণ জলজ বাস্তুতন্ত্র। এ বাস্তুতন্ত্রে রয়েছে ছোট-বড় ৯৩ প্রজাতির মাছ, চিংড়ি ও গাঙের ডলফিন।

তিনি বলেন, হালদা নদী কার্পজাতীয় মাছের রুই, কাতল, মৃগেল, কালিবাউশের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে বর্তমানে চলছে কার্পজাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার ভরা প্রজনন মৌসুম। প্রজনন মৌসুমে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসের অমাবস্যা, অষ্টমীও পূর্ণিমার তিথিতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতসহ পানির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের (পানির তাপমাত্রা, পানির স্রোত, পানির স্তর, তড়িৎ পরিবাহিতা, টারবিডিটি, দ্রবীভূত অক্সিজেন, পিএইচ ইত্যাদি) মিথস্ক্রিয়তায় হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ঘটে।

হালদা নদীর ডিম আহরণকারী কামাল সওদাগর বলেন, গত সোমবার রাতে বজ্রসহ বৃষ্টির আলামত দেখে তিনি ডিম সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে নদী পাহারায় ছিলেন। কিন্তু পরিমিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং নদীতে লবণাক্ত পানি থাকায় মাছ ডিম ছাড়েনি। নদীতে স্পষ্ট লবণাক্ততা পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

একইভাবে মধ্যম মাদার্শা এলাকার ডিম সংগ্রহকারী আশু বড়ুয়া বলেন, বৃষ্টি হয়েছে অনেক দিন আগে। মা মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বজ্রসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের প্রয়োজন। তা ছাড়া নদীতে লবণাক্ত পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। লবণাক্ত পানিতে ডিম না ছাড়া মাছের স্বভাবজাত ধর্ম বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহিদুল আলম বলেন, আবহাওয়া অনুকূল থাকলে মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়তে পারে। এবার যদি পরিবেশ অনুকূলে থাকে হালদায় আশানুরূপ ডিম পাওয়া যাবে। নদী থেকে আহরিত ডিম থেকে রেণু ফোটানোর জন্য সরকারিভাবে স্থাপিত হ্যাচারি এরই মধ্যে সংস্কার ও প্রয়োজনীয় উন্নয়ন করা হয়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
হালদা,ডিম ছাড়েনি মা মাছ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close