হাসমত আলী, গাজীপুর

  ২৪ মে, ২০২৩

নজিরবিহীন নিরাপত্তায় আজ গাজীপুর সিটির ভোট

ছবি : হাসমত আলী

নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে সিটি করপোরেশন ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সিটি করপোরেশন এলাকার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৩ জন ভোটার এবারই প্রথম ইভিএমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

ভোটগ্রহণ শেষে শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে স্থাপিত রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ফল ঘোষণা করা হবে। এ দিকে ভোট উপলক্ষে সিটি করপোরেশন এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। কেন্দ্রগুলোতে থাকছে সিসি ক্যামেরা। নিরাপত্তায় বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, এপিবিএন এবং আনসার ভিডিপি সদস্য মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ১৩ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটগ্রহণের দায়িত্বে রয়েছেন ১০ হাজার ৯৭১ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা। পাশাপাশি ১৮ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ৫৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, র‌্যাবের ৩০টি দল, বিজিবির ১৩ প্লাটুন সদস্য নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছেন।

এবারের গাজীপুর সিটির নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৮ জন। তারা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আজমত উল্লা খান (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন (লাঙ্গল), সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন (টেবিল ঘড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম (হাতী), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান (হাতপাখা), জাকের পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. রাজু আহমেদ (গোলাপ ফুল), গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম (মাছ) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. হারুন অর রশিদ (ঘোড়া)।

বুধবার সকালে গাজীপুর শহরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে নির্বাচন উপলক্ষে নিরাপত্তার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া মহানগরের ৫টি ভেন্যু থেকে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ইভিএম মেশিনসহ ভোট গ্রহণের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে।

গাজীপুর নগরীর শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিফ্রিংয়ের সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমানসহ পুলিশ, বিজিবি, আনসার বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় নির্বাচনে নিরাপত্তায় নিয়োজিত সদস্যদের উদ্দেশে মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে আপনারা দায়িত্ব পালনের জন্য এসেছেন। একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন যাতে হয়, সে বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করা। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিরাপদে যাতে ভোট দিতে পারেন সে ব্যবস্থা করা। তিনি বলেন, পুরো গাজীপুর ও বিশ্বের লোকজন তাকিয়ে আছে এ নির্বাচনের দিকে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব, একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার। ব্রিফিংয়ের পর তারা নিজ নিজ ভোট কেন্দ্রের দায়িত্ব বুঝে নেন।

জানা গেছে, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নিরাপত্তায় বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, র‌্যাব, ব্যাটালিয়ান আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত ৫৭টি মোবাইল ফোর্স নির্বাচনী এলাকার ৫৭ ওয়ার্ডে, প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে স্ট্রাইকিং ফোর্স একটি এবং মহানগরের ৮টি থানায় একটি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স রয়েছে। এছাড়া প্রতি দুইটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে দলসহ র‌্যাবের ৩০টি দল, ৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে এক প্লাটুন হিসেবে বিজিবির ১৩ প্লাটুন সদস্য এবং ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করবেন।

দুপুরে জয়দেবপুর দারুসসালাম (গোরস্থান) ফাজিল মাদরাসা ও এতিমখানায় গিয়ে দেখা গেছে, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নির্বাচনের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা ইভিএম মেশিনসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম বুঝে নিচ্ছেন। পরে তারা কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ভ্যান, রিকশা বা পিকআপযোগে স্ব স্ব কেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা দেন। এ ভেন্যু থেকে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ৫, ১০ ও ১১নং ওয়ার্ড এবং সাধারণ কাউন্সিলর ১৩ থেকে ১৫ এবং ২৮ থেকে ৩৩নং ওয়ার্ডের নির্বাচনী সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া মহানগরের চৌরাস্তা এলাকার চান্দনা উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ ও পশ্চিম চান্দনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ১, ২, ৩, ৪ ও ৬নং ওয়ার্ড এবং সাধারণ কাউন্সিলর ১ থেকে ১২ এবং ১৬ থেকে ১৮নং ওয়ার্ড, কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ থেকে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড এবং সাধারণ কাউন্সিলর ১৯ থেকে ২৭নং ওয়ার্ড, ধীরাশ্রমের গিরিজা কিশোর (জিকে) আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ও ধীরাশ্রম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ১৩, ১৪, ১৫ ও ১৬নং ওয়ার্ড এবং সাধারণ কাউন্সিলর ৩৭ থেকে ৪৮নং ওয়ার্ড এবং বোর্ডবাজারের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ১২, ১৭,১৮ ও ১৯নং ওয়ার্ড এবং সাধারণ কাউন্সিলর ৩৪ থেকে ৩৬ ও ৪৯ থেকে ৫৭নং ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলোতে ইভিএম মেশিনসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে।

নির্বাচনের রিটার্নিং অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিটির ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৩৫১টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বাকি ১২৯টি কেন্দ্র সাধারণ কেন্দ্র। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রধারী একজন এসআই বা এএসআই ও তিনজন কনস্টেবল, একজন অস্ত্রধারী অঙ্গীভূত আনসার পিসি, একজন এপিসি (অস্ত্রধারী) এবং ১০ জন (৬ জন পুরুষ এবং ৪ জন মহিলা) আনসার বা ভিডিপি সদস্যসহ ১৬ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে তাদের সঙ্গে আরো একজন কনস্টেবলসহ ১৭ জন দায়িত্ব পালন করছেন।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ৩৬০ ডিগ্রি সিসিক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এসব ক্যামেরার মাধ্যমে ভোটের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। কোনো অনিয়ম দেখতে পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব ক্যামেরা দিয়ে গোপন কক্ষ ছাড়া পুরো কক্ষে, ভোটকক্ষের বাইরে ভোটারদের সারিসহ সর্বিক চিত্র দেখা যাবে। প্রতিটি কেন্দ্রে অতিরিক্ত ইভিএম মেশিন রাখা হচ্ছে। মেশিন মেরামতের জন্য ট্রাবল শুটারও রাখা হয়েছে।

নির্বাচনী এলাকায় মঙ্গলবার মধ্যরাত ১২টা থেকে মোটরসাইকেল এবং বুধবার দিবাগত মধ্যরাত ১২টা থেকে ভারী যানবাহনসহ ট্রাক, পিকআপ ইত্যাদি চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ২৫ মে মধ্যরাত থেকে ভারী যানবাহন চলাচলের নিষেধাজ্ঞা ওঠে গেলেও মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে ২৬ মে সকাল ৬টা পর্যন্ত। এছাড়া নির্বাচনী এলাকায় ২৩ মে ভোর ৬টা থেকে ২৭ মে দিবাগত রাত ১২ পর্যন্ত আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্সধারী কর্তৃক আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন, আগ্নেয়াস্ত্রসহ চলাচল নিষিদ্ধের পাশাপাশি সব ধরনের বিস্ফোরক ক্ষতিকর দ্রব্য ব্যবহার অস্ত্রশস্ত্র, তলোয়ার, বর্শা, বন্ধুক, দা, ছুরি, কাঁচি, লাঠি ইত্যাদি বহন এবং আতশবাজি ও পটকা ফোটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এ নির্বাচনে ৮ জন মেয়র প্রার্থী, ২৪৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং ৭৯ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্য একজন মেয়র, ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৫৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৯ জন নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত করবেন। অবশ্য এরই মধ্যে একজন সাধারণ কাউন্সিলর বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে পুরুষ ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৭ জন, নারী ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৮ এবং ১৮ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন।

পিডিএসও/এমএ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নজিরবিহীন নিরাপত্তা,গাজীপুর সিটি ভোট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close