আখলাছ আহমেদ প্রিয়, হবিগঞ্জ

  ২৪ মে, ২০২৩

পথশিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ‘চেতনা স্কুল’ 

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশন এলাকার ছিন্নমূল পথশিশুদের শিক্ষাদানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশন এলাকার ছিন্নমূল পথশিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ‘চেতনা স্কুল’। সপ্তাহে তিন দিন খোলা আকাশের নিচে চলে স্কুলের পাঠদান। এতে শিক্ষাগ্রহণ করছে ৫০ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৩০ জন পথশিশু। বাকিরা এলাকার দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়ে। মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীদের খাবার দেওয়া হলেও টাকার অভাবে সপ্তাহে তিন দিন সম্ভব হয় না। তবে তাদের শিক্ষাদানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।

জানা যায়, ২০১৯ সালের ২ নভেম্বর শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকার নিজঁগাও এলাকায় চেতনা স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করে পথশিশু নিকেতন ফাউন্ডেশন। বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুর জন্য ভ্রাম্যমাণ চেতনা স্কুল যাত্রা শুরু করে। এরপর থেকে ওই ফাউন্ডেশনের সদস্যদের মাসিক চাঁদার টাকায় পরিচালনা করা হয় স্কুলটি।

শিশুদের দেওয়া হয় বিনা মূল্যে বই, খাতা, কলম ও শিক্ষাসামগ্রী। মাঝেমধ্যে দেওয়া হয় খাবার। প্রতি ৬ মাস পরপর শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় নতুন পোশাক। সপ্তাহে তিন দিন শুক্র, শনি ও মঙ্গলবার ক্লাস নিচ্ছেন ফাউন্ডেশনের ১২ জন স্বেচ্ছাসেবী। বিকেল ৩টায় ক্লাস শুরু হলে চলে ৫টা পর্যন্ত। খোলা আকাশের নিচে একটি সাদা বোর্ড ও মার্কার পেনের সাহায্যে তাদের শেখানো হয় বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও আরবি।

শুরুতে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম থাকলেও বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ জন। এর মধ্যে বেশির ভাগই রেলস্টেশন এলাকার ছিন্নমূল পথশিশু। ইতিমধ্যে প্রাক-প্রাথমিক শেষ করে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৫ জন শিক্ষার্থী। শুক্রবার (১৯ মে) প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন বই বিতরণ করা হয়েছে। তা ছাড়া দুজন শিক্ষার্থীকে স্থানীয় একটি মাদরাসায় ভর্তি করেছে পথশিশু নিকেতন ফাউন্ডেশন।

স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, রেলস্টেশন এলাকায় খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করা হলেও বৃষ্টির দিনে সমস্যা দেখা দেয়। যে কারণে এর পাশের আহাদ মিয়ার বাগানের নিচে ক্লাস করান তারা। অনেক শিক্ষার্থী এখন বাংলা-ইংরেজিতে নিজেদের নাম, পিতা-মাতার নামসহ অনেক কিছু শিখতে পেরেছে। সালেক আহমেদ, আখি আক্তার ও রুজিনা আক্তারসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী খুবই ভালো পড়াশোনা করছে। তাদের সঠিক শিক্ষাদানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন তারা।

স্কুলের নির্বাহী পরিচালক নাছিমা আক্তার বলেন, স্কুলটি প্রতিষ্ঠাতালগ্ন থেকে কাজ করছি। একটাই উদ্দেশ্য পথশিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়ানো। সপ্তাহে তিন দিন আমরা ১২ জন সদস্য ক্লাস নিচ্ছি। শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আগ্রহী করে তুলছি। আমাদের পথশিশু নিকেতন ফাউন্ডেশনের মাসিক চাঁদার টাকা দিয়ে শিশুদের শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হয়। আবার মাঝেমধ্যে অনেকেই স্পন্সর করে থাকেন। ফান্ডে টাকা জমা হলে নতুন পোশাকের অর্ডার দেওয়া হয়। শিশুদের মধ্যে ভালো মানের খাবার বিতরণ করা হয়।

পথশিশু নিকেতন ফাউন্ডেশনের সভাপতি শাহ নাজিমুল হক বলেন, আমি যখন কলেজে যেতাম, তখন পথশিশুরা ৫-১০ টাকার জন্য পা ধরে কান্নাকাটি করত। তাদের এমন আচরণে কলেজের বন্ধুরা অনেকেই অতিষ্ঠ হয়ে উঠতেন। ভাবতাম, তাদের অনেকেরই মা-বাবা বা অভিভাবক নেই। তাই তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুরুতেই ১১ জন সদস্য নিয়ে পথশিশুদের কল্যাণে কাজ শুরু করি। দীর্ঘ দুই বছর পর শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশনের পাশে আমরা পথশিশু নিকেতন ফাউন্ডেশন উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করি ‘চেতনা স্কুল’। বর্তমানে ৫০ জন দরিদ্র ও পথশিশুদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এতে আমরা চেতনা স্কুলের মাধ্যমে শিশুদের আলোর পথ দেখাতে পারছি।

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজরাতুন নাঈম বলেন, পথশিশুদের শিক্ষা দিয়ে প্রশংসনীয় কাজ করছে সংগঠনটি। উপজেলা প্রশাসন তাদের পাশে আছে। তাদের সহযোগিতা করেছি, আগামীতে করব। স্কুলের পরিচালকরা যদি সহযোগিতার জন্য লিখিত আবেদন করেন, তাহলে তাদের সহযোগিতা প্রদানে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।

পিডিএসও/এমএ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পথশিশু,শিক্ষার আলো,চেতনা স্কুল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close