ইমরান হোসেন সুজন, নবাবগঞ্জ (ঢাকা)

  ২৫ মার্চ, ২০২৩

বাঙ্গির গ্রাম ভাঙাভিটা

ঢাকার নবাবগঞ্জের ইছামতি নদীর তীরে সারিবদ্ধভাবে বাঙ্গিবোঝাই ইঞ্জিনচালিত নৌকা। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

পূর্ব আকাশে তখনও সূর্যের দেখা মেলেনি। গ্রামের কৃষকেরা ব্যস্ত জমি থেকে বাঙ্গি তুলতে। সূর্যের তাপ বাড়ার আগেই খেত থেকে বাঙ্গি তুলে বিক্রির জন্য নিতে হবে হাটে। নয়ত বাঙ্গিগুলো বিক্রি করার জন্য কোন ক্রেতা পাওয়া যাবেনা। এমনই দৃশ্য দেখা যায় ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার ইছামতি নদীর কূলঘেঁষে গড়ে উঠা গ্রামের নাম ভাঙাভিটায়। বাঙ্গির ম-ম ঘ্রাণ এই গ্রামের পথ দিয়ে হেঁটে গেলে নাকে আসে। গ্রামটি এখন বাঙ্গির গ্রাম নামেও পরিচিত।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকালের হাট ধরতে কৃষকদের তোড়জোড়। খেত থেকে বাঙ্গি উঠিয়ে ভ্যান ও ডালিতে রাখছেন। স্থানীয়রা জানায় প্রায় ২০০ বছর আগে এখানে মানুষের বসতি শুরু হয়। কৃষির ওপর ভিত্তি করেই একসময় জীবন-জীবিকা শুরু হয় এখানকার মানুষজনের।

জানা গেছে, একসময় ভাঙাভিটা এলাকায় রসুন, মিষ্টিকুমড়া, মটরশুটি ও কালোজিরা চাষ হলেও বাঙ্গি চাষের পর থেকে পাল্টে যায় জীবনচিত্র। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে অনেকর মুক্তি মেলে বাঙ্গি চাষের মাধ্যমে। দ্রুত বদলাতে থাকে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান। সারা দেশে বিভিন্ন জাতের বাঙ্গির দেখা মিললেও ভাঙাভিটার বাঙ্গির সুনাম অনেক আগে থেকেই। তাই চাহিদার কথা বিবেচনা করে ভাঙাভিটা এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আবাদ করা হয় মওসুমি ফল বাঙ্গির। ভাঙাভিটায় দৃষ্টি যত দূর যায়, চোখে পড়ে শত শত বিঘা বাঙ্গির খেত। বাতাসের সঙ্গে নাকে ভেসে আসে বাঙ্গির ঘ্রাণ। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় ভাঙাভিটার বাঙ্গি। যে কারণে সারা দেশের মানুষের কাছে ভাঙাভিটার বাঙ্গির চাহিদাও ব্যাপক। মূলত ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত বাঙ্গি চাষ হয়। তবে সড়কপথে যোগাযোগব্যবস্থা ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় বাঙ্গি নিয়ে বাজারে আসতে ভোগান্তি পোঁহাতে হয় কৃষকদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটি ঝুড়িতে ১৪-১৮টি মাঝারি থেকে বড় বাঙ্গি দিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি ঝুঁড়ি ৪০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাকডাকা ভোরের আগেই বাজারে গিয়ে হাজির হয় ক্রেতা ও বিক্রেতারা। ইছামতি নদীর তীরে সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো আছে ক্রেতাদের ইঞ্জিনচালিত নৌকা। ঢাকার কাওরানবাজার, আব্দুল্লাহপুর, শামবাজার, কোরানীগঞ্জ, দোহার, মানিকগঞ্জ, শ্রীনগর, মুন্সিগঞ্জসহ অনেক জায়গায় থেকে তারা বাঙ্গি কেনার জন্য নৌকা নিয়ে আসছে। অনেক পাইকার গাড়ি নিয়ে রাস্তা থেকে কিনে নিচ্ছে। এখানে বাঙ্গি কেনা বেচা হয় ভোর থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত আবার বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। দুবেলাতেই বাঙ্গির বাজার ক্রেতা বিক্রেতা দিয়ে ভরপুর থাকে।

বাঙ্গি চাষি রবীন্দ্র মন্ডল বলেন, এই মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে বাঙ্গির ফলন ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পুরো রোজার মাসে বাঙ্গি বিক্রি করতে পারলে আমরা ভালো লাভবান হবো। সরকারিভাবে আমাদের প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন ঋণ দিলে করলে আমরা আরো লাভবান হতে পারবো।

চাষি নিতাই মন্ডল বলেন, দুইদিন আবহাওয়া খারাপ থাকায় অনেক বাঙ্গি নষ্টও হয়ে গেছে। তাই সেগুলো দূরদূরান্ত থেকে পাইকারিরা না আসতে পারায় প্রতি ঝুড়ি বিক্রি করেছি ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়।

বাঙ্গির ক্রেতা জসিমউদ্দিন বলেন, আমি প্রায় চল্লিশ বছর ধরে এখান থেকে বাঙ্গি কিনে বিভিন্ন জায়গায় পাইকার ও খুচরা বিক্রি করি। কাল থেকে আজকের বাজারের দাম ঝুড়িপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা বেশি। রমজানে এর চাহিদা থাকার কারণে বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে, আমরাও বেশি দামে বিক্রি করবো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাহিদুজ্জামান বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এই বছর বাঙ্গির ফলন ভালো হয়েছে। ভাঙ্গা ভিটার মাটি বাঙ্গি চাষের উপযোগী হওয়ায় প্রায় ২১৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নবাবগঞ্জ,বাঙ্গির গ্রাম,ভাঙাভিটা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close