গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ২৪ মার্চ, ২০২৩

সিরাজগঞ্জে বাড়ছে যক্ষ্মা রোগী

যন্ত্রের অভাবে শনাক্ত হচ্ছে না যক্ষ্মা, ব্যাহত চিকিৎসা

ছবি : সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসেই প্রায় হাজার ব্যক্তির শরীরে যক্ষ্মা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪২ জনই শিশু।

এদিকে জেলার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে যক্ষ্মা শনাক্তের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। ফলে রোগ নির্ণয় না হওয়ায় অনেকেই থেকে যাচ্ছেন চিকিৎসার বাইরে। এতে সরকারের ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে যক্ষ্মা নির্মূলের ঘোষণার বাস্তবায়ন অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিভিন্ন হাসপাতাল ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় যক্ষ্মার কেস নোটিফিকেশন রেট (সিএনআর) ১৬৬ দশমিক ৯০। অর্থাৎ এক লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ১৬৭ জন যক্ষ্মায় আক্রান্ত রয়েছেন।

২০২২ সালে ৬২ হাজার ৫৮৮ জনের কফ ও বুকের এক্স-রে পরীক্ষা করা হয়। এতে ৫ হাজার ৩৮৩ জনের শরীরে যক্ষ্মা রোগের জীবাণু ধরা পড়ে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসেই যক্ষ্মার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে ৯২৮ জনের শরীরে।

এদিকে শিশু শরীরেও উদ্বেগজনক হারে যক্ষ্মার জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে। ২০২২ সালে ২৫২ জন শিশুর শরীরে যক্ষ্মার জীবাণু পাওয়া যায়। তবে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসেই এই শনাক্তের সংখ্যা ৪২টি শিশু।

এদিকে জেলায় যক্ষ্মার চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তের প্রধান পদ্ধতি মল পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে। এতে শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্ত অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ছে। জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে তাড়াশ, উল্লাপাড়া ও চৌহালিতে বুকের এক্স-রে করার ডিজিটাল যন্ত্র ও কফ পরীক্ষার জিন এক্সপার্ট যন্ত্র নেই।

এ ছাড়া যক্ষ্মার চিকিৎসার জন্য জেলায় মাইক্রোসকপি যন্ত্র ১৬টি ও ট্রু-নেট যন্ত্র রয়েছে মাত্র দুটি। জেলায় যক্ষ্মা শনাক্তের হার অনুযায়ী, এ সব যন্ত্র প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

তা ছাড়াও সরকারি হাসপাতালগুলোতে হাড়ের মধ্যে যক্ষ্মা পরীক্ষার জন্য এমআরআই, আক্রান্ত স্থানের মাংস পরীক্ষার জন্য কোনো যন্ত্রপাতি ও ব্যবস্থা নেই। ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে যক্ষ্মা নির্মূল করতে সরকারের ঘোষণা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন রামপদ রায় বলেন, ‘সিরাজগঞ্জে যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা কম নয়। কিন্তু তাদের সবাইকে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা আমাদের নেই। হাড় ও ফুসফুসের যক্ষ্মার পরীক্ষা এবং আক্রান্ত স্থানের মাংস পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা আমাদের নেই। এসব পরীক্ষা করতে বেসরকারি চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান বা ঢাকা যেতে হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত খরচের সঙ্গে অনেক সময় ক্ষেপণ হয়। এ কারণে অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

সিভিল সার্জন আরও বলেন, জনসাধারণকে যক্ষ্মা বিষয়ে সচেতন করা ও প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করা হলে ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশকে যক্ষ্মা নির্মূলের ঘোষণা বাস্তবায়ন অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

সিরাজগঞ্জ বক্ষব্যাধি হাসপাতালের কনসালটেন্ট এ বি এম ফারহান ইমতিয়াজ বলেন, যক্ষ্মা একটি ছোঁয়াচে ব্যধি। তাই যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের সবাইকে টিবি প্রভেন্টিভ থেরাপি (টিপিটি) চিকিৎসা দিতে হয়। যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু সব ধরনের যক্ষ্মা পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় সঠিক সময়ে অনেকের যক্ষ্মা শনাক্ত করা যাচ্ছে না। অনেক সময় রোগীকে চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ায় সুস্থ হতে সময় লাগে। এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সিরাজগঞ্জ,যক্ষ্মা রোগী
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close