মৃণাল সরকার মিলু, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ)

  ২৩ মার্চ, ২০২৩

২০ কোটি টাকা ব্যয়ে পুনঃখনন করা কাটাগাঙ পানিশূন্য

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পানিশূন্য কাটাগাঙ। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে দুই থেকে আড়াই বছর আগে পুনঃখনন করা ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কাটাগাঙ পানিশূন্য হয়ে পড়ায় এখন খাঁ-খাঁ করছে। আর প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ গাঙ পুনঃখনন, গাঙের উভয় পাড়ে বৃক্ষরোপণ করা হলেও বর্তমানে চলমান বোরো মৌসুমে তা কোনো কাজেই আসছে না।

জানা গেছে, যথাযথভাবে গাঙ খনন না করায় পৌষের পরপরই পানিশূন্য হতে থাকা গাঙটি গ্রীষ্ম মৌসুমে এসে প্রায় একেবারেই পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। এতে কৃষক সেচ সুবিধা পাচ্ছেন না। মৎস্যজীবীদের দেশি মাছ শিকার বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি পানিশূন্যতার কারণে নৌ-চলাচলও বন্ধ আছে। এমনটি বলছিলেন তাড়াশের ভেটুয়া গ্রামের কৃষক মো. হাসমত আলী।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চলনবিল অঞ্চলের কাটাগাঙ অধ্যুষিত এলাকার শত শত কৃষককে বিনা মূল্যে সেচ সুবিধায় আনতে, বর্ষাকালে পণ্য পরিবহন নৌ-চলাচলে নাব্যতা সংকট দূর করতে এবং মৎস্য ভাণ্ডারখ্যাত চলনবিলের দেশীয় প্রজাতির মিঠাপানির মাছের অভয়াশ্রম করতে চলনবিলের জেলার তাড়াশ উপজেলার ভেটুয়া থেকে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা অষ্টমনিষা এলাকায় প্রবাহিত ২৪ কিলোমিটার ওই কাটাগাঙ নদী পুনঃখনন করা হয়। চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়ন, মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়ন, পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়ন, ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত বিলের হাজার হাজার হেক্টর বোরো জমিতে বিনা মূল্যে কৃষক সেচ সুবিধা পাবে। এ বিষয়টি লক্ষ রেখেই পানি উন্নয়ন বোর্ড ৬৪ জেলার ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (প্রথমপর্যায়) আওতায় প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রত্যন্ত চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ওই গাঙটি পুনঃখনন কাজটি ২০২০ সালের শেষের দিকে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

সরেজমিনে তাড়াশ উপজেলাা কাটাগাঙে গিয়ে দেখা গেছে, এখানে প্রায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ পুনঃখনন করা কাটাগাঙের ৮০-৮৫ ভাগ স্থানেই পানি নেই। শুকনো খড় খড়ে গাঙে বর্ষায় ব্যবহৃত নৌকাগুলো পড়ে আছে। খাল থেকে সেচযন্ত্র দিয়ে পানি তুলছে এমন দৃশ্য চোখে পড়ছে না।

চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের সদস্যসচিব এস এম মিজানুর রহমান বলেন, এ ধরনের ক্ষুদ্র কাজ করে চলনবিলের কোনো কাজে আসবে না। চলনবিলের উন্নয়ন করতে হলে সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন করতে হবে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজ করা মানে শুধু কিছু ব্যক্তির লাভ হবে। আর সরকারি কর্মকর্তার লাভ হবে। কিন্তু মানুষের কোনো উপকার হবে না। এ ধরনের কাজ করে চলনবিলের কোনো সুফল হবে না। শুধু ওই প্রোজেক্ট, যারা বাস্তবায়ন করেছেন তাদেরই লাভ হবে।

কুন্দাইল গ্রামের কৃষক জাকিরুল ইসলাম বলেন, কাটাগাঙটি পুনঃখনন করায় গাঙসংলগ্ন এলাকার কৃষকরা খুবই খুশি হয়েছিলেন। কেননা ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রের মাধ্যমে বোরো এবং রবিশস্য আবাদে সেচকাজে যে অর্থ কৃষকের ব্যয় হয়। তার চেয়ে ডিজেলচালিত সেচ যন্ত্র দিয়ে খাল থেকে ভাসা পানি ওঠালে সেচ খরচ প্রায় অর্ধেক কমে আসে। অল্প সময়ে বেশি পরিমাণ জমিতে পানি দেওয়া যায়।

কুন্দাইল গ্রামের আরেক কৃষক রমজান আলী বলেন, এটি পুনঃখনন করার সময় নির্ধারিত খননের গভীরতায় ত্রুটিপূর্ণ ছিল। এর খনন করা মাটি গাঙের পাড় বা তীরে আলগাভাবে রাখায় গত দুটি বর্ষা মৌসুমেই সেই মাটি গলে আবার সেই খালের তলানিতেই গিয়েই পড়েছে। এতে অল্প সময়ে গাঙটির বেশির ভাগ অংশ ভরাট হয়ে পানিশূন্য হয়ে পড়ছে।

কুশাবাড়ী এলাকার ইঞ্জিনচালিত নৌ-মালিক মিরাজুল ইসলাম বলেন, কৃষক, মৎস্যজীবী, নৌ-চলাচল কোনো ক্ষেত্রেই কাটাগাঙ পুনঃখননে তেমনটি সুফল আসছে না।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, সারা বছর পানি থাকবে এমনটি আশা করা ঠিক না। তবে কিছু সময়ের জন্য হলেও কাটাগাঙটি পুনঃখনন করায়, বর্ষা মৌসুমে নৌ-চলাচলে সুবিধা হওয়ার পাশাপাশি রবিশস্য ও বোরো আবাদে কিছু সময়ের জন্য সেচ সুবিধায় এসেছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কাটাগাঙ,কাটাগাঙ পানিশূন্যতা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close