গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ২৩ মার্চ, ২০২৩

হাড়ের গুঁড়ো যাচ্ছে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

তুচ্ছ ভেবে ফেলে দেওয়া হার সংগ্রহ করে গুঁড়ো করে পাঠানো হচ্ছে দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোতে। সিরাজগঞ্জে একমাত্র সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের কালিয়া গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে হাড় গুঁড়ো করে সার তৈরির কারখানা। আর এ থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকার উৎপাদন হয়, যা খুলনার ব্যবসায়ীরা কিনে দিচ্ছে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে।

জানা গেছে, এই জেলা ছাড়াও আশপাশের পাবনা, নাটোর, বগুড়া, টাঙ্গাইল জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হাড় সংগ্রহ করে এখানে এনে প্রতি কেজি হার ১৪-১৫ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। এই হার মেশিনের সাহায্যে গুঁড়ো করে ২০-২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়। প্রতি মাসে প্রায় দুই ট্রাক হাড়ের গুঁড়ো খুলনায় মহাজনদের কাছে সরবরাহ করা হয়। এই কারখানায় ১৫ থেকে ২০ জন নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

এই কারখানায় কর্মরত নারীশ্রমিক চম্পা ও আছের বলেন, ‘আমরা এখানে প্রায় ১০ বছর কাজ করি। দৈনিক সাড়ে তিন শ টাকা করে বেতন পাই, যা দিয়ে আমার সংসার চলে। স্বামীর আয়ের সঙ্গে আমার আয় সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।’

হাড় সংগ্রহকারী সোলায়মান বলেন, আমরা কয়েকজন প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে হাড় সংগ্রহ করে এখানে ১৪-১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করি। দৈনিক প্রায় গড়ে ২০ কেজি হাড় সংগ্রহ হয়। এ থেকে যে টাকা পাই তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চলে। তিনি আরো জানান, গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন কসাইরা আর আগের মতো হার না ফেলে মাংসের সঙ্গেই বিক্রি করে দেন। তাই এখন আগের মতো আর হার সংগ্রহ করতে পারি না।

এই কারখানার মালিক হাফিজুল শেখ বলেন, আমার বাবার আমল থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে এই ব্যবসা শুরু করি। সারা দেশে ৫-৬টি হাড়ের কালকারখানা রয়েছে, তার মধ্যে সিরাজগঞ্জে একটি। আমরা কুড়ানো হাড় কিনে নিয়ে গুঁড়ো করে খুলনার ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করি। শুনেছি তারা এসব গুঁড়ো দেশের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। অনেক সময় চাহিদামতো গুঁড়ো সরবরাহও করতে পারি না। এখন আবার হাড়ও তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে আমাদের হাড়ের গুঁড়ো উৎপাদনের ওপর প্রভাব পড়েছে।

এই হাড়ের গুঁড়ো ক্রেতা খুলনার ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই হাড়ের গুঁড়ো থেকে গবাদি পশুর খাবার, মুরগির খাবার ও ওষুধ কোম্পানিতে ক্যাপসুল তৈরির কভার তৈরি হয়।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাত বলেন, বিষয়টি আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। তবুও জানার পর এ বিষয়ে খবর নিয়েছি। তারা হাড় গুঁড়ো করে ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
হাড়ের গুঁড়ো,ওষুধ কোম্পানি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close