গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ১৮ মার্চ, ২০২৩

বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির বন্ধু শকুন

ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহারই বিলুপ্তির অন্যতম কারণ

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

অতীতে গ্রামবাংলাসহ সিরাজগঞ্জে অন্ধ বিশ্বাসকে সামনে রেখে কোনো পাড়ামহল্লা বা বাড়ির ওপর দিয়ে শকুন উড়লেই দাদি-নানিরা বলতেস ‘এই গেদি মরার হগুন উড়ত্যাছে গোয়াল ঘরে ধুমাদে।’ তাদের কথায় সাড়া দিয়ে নাতি বউ, ছেলে বউ, মেয়েরা মাটির কাদায় (মাটির পাত্র) ঘষির আগুন জালিয়ে গরু, ছাগলকে বিপদের হাত থেকে রক্ষার জন্য গোয়াল ঘরে ধোঁয়া দিত। কালের আবর্তে সেই অন্ধ বিশ্বাস আজ আর নেই। সেই প্রকৃতির চরম বন্ধু শকুনও হারিয়ে যেতে বসেছে।

জানা গেছে, শকুন সাধারণত আকাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ওড়ে। শকুন দেখতে যে খুব সুন্দর পাখি তা কিন্তু নয়। এদের মাথা, গলা ও ঘাড়ে কোনো পালক নেই। এরা প্রশস্থ ডানায় ভর করে উড়ে বেড়ায় আকাশের অনেক ওপরে। মরা প্রাণীর মাংস খেয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন বেঁচে থাকা শকুন আজ বিলুপ্তির পথে। এরা অসুস্থ আর মৃতপ্রায় প্রাণীর চারদিকে শিকারি পাখির মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে উড়তে থাকে এবং প্রাণীটি মরার জন্য অপেক্ষা করে। চক্রাকারে ঘোরা কোনোটিকে মাটিতে নামতে দেখলে অন্যরা তাকে অনুসরণ করে প্রাণীটি মরে গেলে তাকে খাওয়ার জন্য শকুনরা হামলে পড়ে। এরা বেশিক্ষণ এক জায়গা উড়তে পারে না এবং ওপরে ওঠায় ঊর্ধ্ব দিকে প্রবহমান বায়ু স্রোতের ওপর নির্ভরশীল।

আরো জানা গেছে, বট, পাকুড়, ডুমুর প্রভৃতি বিশালাকার গাছে সাধারণত লোকচক্ষুর অন্তরালে শকুন বাসা বাঁধে। গুহায়, পর্বতের চূড়ায় বা গাছের কোটরে এরা এক থাকে এবং তিনটি সাদা বা ফ্যাকাশে ডিম পাড়ে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বে প্রায় ১৮ প্রজাতির শকুন দেখা যায়। বাংলাদেশে ৬ প্রজাতির শকুন রয়েছে। ৪ প্রজাতি স্থায়ী আর ২ প্রজাতি পরিযায়ী। শকুনই কেবল রোগাক্রান্ত মৃত প্রাণী খেয়ে হজম করতে পারে। মানুষের পক্ষে যা ক্ষতিকর সেসব আবর্জনা শকুন খায় এবং পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখে। শুধু তা-ই নয় অ্যানথ্যক্স, যক্ষ্মা, খুরা রোগের সংক্রমণ থেকে অবশিষ্ট জীবকুলকে রক্ষা করে বলে মেডিসিন গবেষক ড. লিন্ডসে তার এক গবেষণায় প্রমাণ করেন বাংলাদেশে ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহারই শকুন বিলুপ্তির অন্যতম কারণ।

পিডিএসও/এমএ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শকুন বিলুপ্ত,প্রকৃতির বন্ধু শকুন,শকুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close