গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ১৭ মার্চ, ২০২৩

আলেয়া জুট মিল চালু, সিরাজগঞ্জের পাটকল শ্রমিকদের সুদিন

সিরাজগঞ্জে রশিদ গ্রুপের আলেয়া জুট মিলে কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা : গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী 

সিরাজগঞ্জে তিন বছর বন্ধ থাকার পর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় জাতীয় জুট মিল চালু হওয়ায় ভাগ্য ফিরেছে শ্রমিকদের। তারা সুদিনের সন্ধান পেয়েছেন। মিলটি কুষ্টিয়ার রশিদ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ নামক প্রতিষ্ঠান ২০ বছরের ভাড়ায় আলেয়া জুট মিল নামে এই পাটকলটি চালু করে। কয়েক বছর পর মিলটি বন্ধ হয়ে গেলে ৯ শতাধিক শ্রমিক অর্থকষ্টে পড়েন। তাদের জীবনে নেমে আসে হতাশার কালো ছায়া। সেই কষ্টের দিন এখন অতীত হতে চলেছে।

মিল সূত্র জানায়, ১৯৬০ সালে সিরাজগঞ্জ শহরের রায়পুরে ৭৫ একর জমির ওপর নর্দান পিপলস্ জুট মিল নামে এ পাটকলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৭২ সালে মিলটি রাষ্ট্রায়ত্ত মিল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিন মিলটি কমবেশি লাভজনক পর্যায়ে ছিল। কিন্তু একশ্রেণির সুবিধাভোগী এবং কাঁচামাল ক্রয়ে শ্রমিক নেতাদের দুর্নীতিসহ নানা কারণে মিলটিকে লোকসান গুনতে হয়। অব্যাহত লোকসানের কারণে ২০০৭ সালে মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন মিলকে ঘিরে নানা ধরনের ক্ষুদ্রশিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও পড়ে হুমকির মধ্যে।

এদিকে কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় মিলটি। এরপর ২০১১ সালে শ্রমিক কর্মচারী ও জনসাধারণের আন্দোলনের কারণে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে ‘জাতীয় জুট মিল’ নামকরণ করে মিলটি পুনরায় চালু করা হয়। এরপর টানা কয়েক বছর চালু থাকলেও ঋণের ভারে ২০১৯ সালে আবার বন্ধ হয়ে যায় মিলটি। এতে সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন শুরু করে। সেই সঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলার আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সামান্য হলেও থমকে যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, জাতীয় জুট মিলে ৭ বছর ধরে কাজ করছেন মাকসুদা খাতুন (৩৫)। তিনি স্প্রিং ডিপার্টমেন্টে মেশিন চালান। শুরুতে ২০০ টাকা দৈনিক হাজিরায় কাজ শুরু করলেও বর্তমানে তার দৈনিক মজুরি দাঁড়িয়েছে ৫০০ টাকা। তিনি জানান, টানা তিন বছর মিল বন্ধ থাকার পর সরকার আলেয়া জুট মিল ভাড়া দিয়েছে। এখন আমি তাদের অধীনে দৈনিক হাজিরায় কাজ করছি। এতে আমার সংসার বেশ ভালোভাবে চলছে।

শ্রমিক রুপালী খাতনি বলেন, মিলটি তিন বছর বন্ধ থাকায় খুব খারাপ অবস্থায় দিনযাপন করেছি। দেরিতে হলেও বেসরকারি খাতে মিলটি খোলার পর হতাশামুক্ত হয়েছি। এখন কাজ করে জীবন চালাতে পারব।

সিরাজগঞ্জ জাতীয় জুট মিলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০ বছরের চুক্তিতে রশিদ গ্রুপ জাতীয় জুট মিলটি ভাড়া নিয়েছে। তবে আমরা সরকারিভাবে বর্তমানে ১৭৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এটি দেখাশোনায় নিয়োজিত রয়েছি।

রশিদ গ্রুপের আলেয়া জুট মিলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আলাউদ্দিন বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে মিলটি ২০ বছরের চুক্তিতে ইজারা নেওয়ার পরের মাস থেকে কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। বর্তমানে নারী ও পুরুষ শ্রমিক মিলিয়ে ৯০০ কর্মী নিয়মিত কাজ করছেন। এতে দৈনিক ২০ টন চট ও বস্তা উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। তবে এ উৎপাদন কিছুদিনের মধ্যে আরো বাড়বে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুস সালাম সরকার এ প্রসঙ্গে জানান, এবার সিরাজগঞ্জ জেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদন হয়েছে ৩৪ হাজার ২৩০ টন। কৃষক পাটের দাম ভালো পাওয়ায় আগামীতে এ উৎপাদন আরো বাড়বে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আলেয়া জুট মিল,সিরাজগঞ্জ,পাটকল শ্রমিক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close