লামা আলীকদম প্রতিনিধি :

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়ক প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করেছে স্থানীয়রা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ।

৪৭৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বান্দরবান জেলার আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়ক প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করেছে স্থানীয় জনসাধারণ। সড়ক নির্মাণের ফলে সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি দুর্গমে বসবাসকারী ম্রো, মার্মা, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বাঙালিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে পর্যটনখাতের সম্ভাবনাও।

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ১৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের (১৬ ইসিবি) মেজর ও প্রকল্প কর্মকর্তা মো. ইশরাকুল হক এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন।

সড়কটির নির্মাণকাজ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধিনস্ত ১৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ান (১৬ ইসিবি)। এ প্রকল্পের সময়সীমা ছিল ২০২২ সালের ৩০ জুন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ২০২২ সালেন ৬ জুন সড়কের সম্পূর্ণ কাজ শেষ করেন বলে জানান তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আলীকদম থেকে পোয়ামুহুরী পর্যন্ত ৩৭ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থে উন্নয়নের জন্য ৩৭৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। সে সময় প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত।

২০১৯ সালে ৩৬.১৭ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে অর্থাৎ ১৩৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা বেড়ে প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয় ৫০৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা। প্রকল্পের শুরুতে ২০১৯ সালের জুনে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও দুই বছর বাড়িয়ে করা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। নির্ধারিত বরাদ্দের চাইতে ৩৫ কোটি টাকা কম খরচে সড়কটি নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন কাজ করা হয় বলে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ১৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ান (১৬ ইসিবি)।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে সড়কে নির্মাণাধীন কয়েকটি ব্রিজ ছাড়া সড়ক কার্পেটিংয়ের পুরো কাজ সমাপ্ত হয়েছে। আলীকদম উপজেলার দুর্গম পাহাড়ের মধ্য দিয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এবং স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সড়ক নির্মাণ কাজটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী। সড়কটি নির্মাণে পাহাড়ের পর পাহাড়ের গা কাটতে হয়েছে। দেশের অন্যতম রিজার্ভ ফরেস্ট মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনভূমির বক্ষভেদ করে খরস্রোতা মাতামুহুরী নদীর কিছুটা কুলঘেঁষে নির্মাণ করা হয় আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়কটি। তবে সড়ক নির্মাণের শুরুর দিকে বন বিভাগের বাধা ছিল প্রচুর। কিন্তু সেনা বাহিনী তা অগ্রাহ্য করে নির্মাণকাজ এগিয়ে নিয়ে যায়।

সড়ক নির্মাণকাজ শেষের দিকে হলেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন পোয়ামুহুরী বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাসাধারণ। তার কারণ হিসেবে জানা যায়, পোয়ামুহুরী বাজার থেকে ১ কিলোমিটার দূরে খেদারঝিরিতে শেষ হয়েছে সড়কের ৩৭ কিলোমিটার অংশ। প্রকল্পটির শেষের নাম ‘পোয়ামুহুরী’ হলেও ওই এলাকার বহুল পরিচিত ‘পোয়ামুহুরী বাজার’ স্পর্শ করেনি সড়কটি!

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহলে আবেদন-নিবেদন করেও সুফল পাননি বলে জানান পোয়ামুহুরী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফরিদুল আলম। তাদের আশা, শেষ পর্যন্ত পোয়ামুহুরী বাজারের সঙ্গে সড়কের সংযোগ তৈরি করবে সেনাবাহিনী।

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপটে বড় এ প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে ছিল ১৬ দশমিক ৯৭ লাখ ঘন মিটার সড়ক নির্মাণে হিল কাটিং, ৩ লাখ ঘন মিটার ব্যাকফিলিং অ্যাবান্টমেন্ট ও উইং ওয়াল, ৩৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট নতুন নির্মাণ, ৯১৯ মিটার আরসিসি ব্রিজ ও ভায়াডাক্ট, ১২৫ মিটার আর্থ ওয়াটার ড্যাম, ৭২ মিটার আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ, ৪২ মিটার ড্রপ স্ট্রাকচার, ৪৮ দশমিক ৩০ কিলোমিটার সাইড ড্রেন এবং ১১ হাজার ২৫০ বর্গ মিটার রোড মার্কিং।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৭ সালে একনেকে প্রকল্পটি পাশ হওয়ার পর পুনরায় ২০১৯ সালে ১৯ মার্চ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়ক নিয়ে বেশকিছু সুপারিশমালা প্রণয়ন হয়। পরে সেসব সুপারিশমালার ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়।

প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস পরিকল্পনা কমিশনের মতামত তুলে ধরেছিলেন এভাবে- ‘আলীকদম-জানালীপাড়া-করুকপাতা-পোয়ামুহুরী সড়কটি নির্মিত হলে সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা জোরদার, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশে সহায়ক হবে।’

পিডিএস/এএমকে

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আলীকদম-পোয়ামুহুরী,সড়ক প্রকল্প,সুফল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close