বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার
আলো জ্বলবে হাজারো ঘরে
সাগরের তলদেশ দিয়ে বিদ্যুৎ যাচ্ছে কুতুবদিয়ায়
সাগরের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল টেনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায়। আগামী মার্চেই বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে সাগরবেষ্টিত দ্বীপ। আলো জ্বলবে দ্বীপটির হাজারো মানুষের ঘরে। সেই দিনটির অপেক্ষায় আছেন তারা। বিশাল বঙ্গোপসাগরে পানির গভীরতা অনেক। তার ওপর প্রতিনিয়ত হুংকার ছাড়ে সাগরের বড় বড় ঢেউ। এই ভয়ানক সাগরের বুকে বসবাস করেন কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার প্রায় দুই লাখ মানুষ।
অনেক কিছু থাকলেও দ্বীপটিতে নেই বিদ্যুৎ। সেখানে শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশাসনিক অবকাঠামো সবই আছে, কিন্তু সাধারণ বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। বায়ু বিদ্যুৎসহ নানা উপায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা করা হলেও আলো জ্বালাতে পারেনি দ্বীপে। বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলেও, সেটি থেকে সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। দেশ স্বাধীনের ৫২ বছর আলোহীন দ্বীপে এবার বিদ্যুতের প্রদীপ জ্বলবে কুতুবদিয়ায়। জাতীয় গ্রীডের সাথে সংযুক্ত হয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সেখানে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। এতে আমূল পরিবর্তন আসবে দ্বীপের পর্যটন, লবণ ও মৎস্য খাতে।
হাতিয়া, নিঝুম দ্বীপসহ কুতুবদিয়া দ্বীপে নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের অধিনে গত বছর জুনে কাজ শুরু করে পাওয়ার সিষ্টেম কোম্পানি লিমিটেডসহ আরো কয়েকটি দেশি-বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরইমধ্যে শেষ হয়েছে সাগরতলে ১০ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন, উপকেন্দ্র নির্মাণ, খঁটি স্থাপন আর অভ্যন্তরীণ লাইন টানাসহ ৮০ ভাগ কাজ। মহেশখালীর উৎপাদিত বিদ্যুৎ উজানটিয়া হয়ে মগনামা ঘাটে সংযুক্ত হবে জাতীয় গ্রীডে। সেখান থেকে সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে কুতুবদিয়া ষ্টেশনে সংযোগ হবে বিদ্যুৎ। চলতি বছরের মার্চেই বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে কুতুবদিয়া, আশা সংশ্লিষ্টদের। কুতুবদিয়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী মু. আবুল হাসনাত জানান, আগামী মাসেই দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ হতে পারে। আর সেজন্যে প্রাথমিকভাবে প্রস্তুতি চলছে ২ হাজার গ্রাহক নিয়ে যাত্রা। নতুন সংযোগে অনলাইন আবেদন চালু রয়েছে বলেও জানান তিনি। উল্লেখ্য, কুতুবদিয়ার প্রায় ২১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বর্তমানে প্রায় ২ লাখ মানুষ বসবাস করেন। কুতুবদিয়া দ্বীপে ১৯৮০ সালে জেনারেটরের মাধ্যমে প্রায় ৬০০ গ্রাহকের মধ্যে সান্ধ্যকালীন কয়েক ঘণ্টার জন্য বিষ্যংৎ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল।
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভাঙায় তা পুণঃসংস্কার না করায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৫ সালে দেড় কিলোমিটার লাইন মেরামত করে দুটি জেনারেটরের মাধ্যমে উপজেলা সদর ও কিছু এলাকায় সন্ধ্যার পর কয়েক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পিডিবি। এ ছাড়া ২০০৮ সালে কুতুবদিয়ায় এক মেগাওয়াট সক্ষমতার বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলেও তেমন কাজে আসেনি। এটিও বন্ধ রয়েছে বর্তমানে।
পিডিএস/এমএইউ