খুলনায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে আমিন উদ্দিন শেখ নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে আদালত দুজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মীর শফিকুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ড-প্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছেন আমজাদ মিনা ও সাবাজ হালদার। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রূপসা উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা।

আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট এনামুল হক রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

আদালত সূত্র জানায়, মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৯ অক্টোবর রাতে আসামি শাবাজ হালদার, আমজাদ মিনা ও জলিল হাওলাদারসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫-৬ জন রাইফেল, বন্দুক ও রামদাসহ ধারালো অস্ত্রের মুখে আমিন উদ্দিন শেখকে তার রূপসা থানার চাঁদপুর গ্রামের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তারা তাকে বাড়ির অদূরে একটি পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে আমিন উদ্দিনের বুকে গুলি এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা কেটে হত্যা করে। হত্যার পর মাথা পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়। পরদিন সকালে পুকুর থেকে খণ্ডিত মাথা দেখে স্থানীয়রা বাদীর বড় ভাই বর্তমানে মৃত শেখ নিজাম উদ্দিনকে সংবাদ দিলে খুলনা থানা পুলিশের সহায়তায় লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করেন। নিহত আমিন উদ্দিনের লাশ ১৯৭১ সালের ২০ অক্টোবর বিকেল ৩টার দিকে তাদের রূপসা থানার চাঁদপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হলে তারা পরিবারের সব সদস্যসহ চাঁদপুর গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। জীবননাশের হুমকির কারণে এবং পরিবেশ না থাকায় বাদী পরে কোনো মামলা করতে পারেননি। সরকার নতুন করে আইনানুগভাবে সুযোগ প্রদান করায় নিহত আমিন উদ্দিনের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে পিতার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানিয়ে আদালতে নালিশি দরখাস্ত করেন। এ ঘটনায় রূপসা থানার ওসি আদালতের নির্দেশে মামলা রুজু করেন।

আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি অ্যাডভোকেট শেখ এনামুল হক বলেন, ২০১০ সালে নিহতের ছেলে অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলার তিন আসামির মধ্যে জলিল হাওলাদার মারা গেছেন। এ ছাড়া সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে আদালত আসামি শাবাজ হালদার ও আমজাদ মিনাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। এটা একটি দৃষ্টান্তমূলক বিচার।