সাহারুল হক সাচ্চু, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ)

  ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

উল্লাপাড়ায় এবার টাকা দিয়ে নিতে হবে সেচ

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বোরো খেতে সেচ। ছবি : সাহারুল হক সাচ্চু

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বোরো (ইরি) ধান আবাদের জন্য জমিতে পানি সেচ বাবদ নলকূপ মালিককে নগদ টাকা নিতে হবে। উপজেলা সেচ কমিটি সেচ বাবদ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। অগভীর ও গভীর নলকূপে বোরো ধান আবাদে জমিতে পানি সেচ বাবদ বিঘা প্রতি হারে দর বেধে দেওয়া হয়েছে।

এর ফলে সেচ বাবদ আর জমির ফসলের ভাগ (অংশ) নেওয়া যাবে না। তবে উপজেলা সেচ কমিটির সিদ্ধান্তের বিষয়টির প্রচার এলাকায় এখনো জোরালোভাবে শুরু করা হয়নি। এদিকে বেশির ভাগ সেচ মেশিন মালিক সেচ বাবদ নগদ টাকার বদলে ফসলের ভাগ নিতে আগ্রহী বলে জানা যায়। প্রায় সব এলাকায় অগভীর নলকূপ মালিকেরা ফসলের ভাগ নেওয়ার চুক্তিতে জমিতে পানি সেচ দিচ্ছেন।

উল্লাপাড়া বিএডিসি অফিস সূত্র জানায়, গোটা উপজেলায় ব্যাক্তিগত, বরেন্দ্র প্রকল্পের নলকূপ মিলে প্রায় তিনশ গভীর নলকূপ চালু রয়েছে। সব গভীর নলকূপই বিদ্যুতচালিত। এছাড়া গোটা উপজেলায় বিদ্যুত ও ডিজেল চালিত মিলে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার অগভীর নলকূপ চালু আছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৫টি বিদ্যুত চালিত এলএলপি সেচ পাম্প এবং সৌর বিদ্যুত চালিত ১০টি সেচ মেশিন চালু আছে।

বিএডিসি অফিস থেকে আরো জানানো হয়, এবারের বোরো ধান আবাদ মৌসুমে বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপে সেচ বাবদ বিঘা প্রতি ১ হাজার ৫০০ টাকা, ডিজেল চালিত গভীর নলকূপে বিঘা প্রতি ২ হাজার ২০০ টাকা, বিদ্যুৎ চালিত অগভীর নলকূপে বিঘা প্রতি ১ হাজার ৭০০ টাকা এবং ডিজেল চালিত অগভীর নলকূপে বিঘা প্রতি ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা সেচ কমিটি এ দর বেধে দিয়েছে। তবে এলাকা ভেদে বিঘা প্রতি দুই থেকে তিনশো টাকা বেশি ধরা আছে বলে জানা গেছে ।

এখন উপজেলার বিভিন্ন মাঠে বছরের প্রধান বোরো ধান ফসলের আবাদ শুরু হয়েছে। কৃষকেরা জমিতে বোরো চারা লাগাচ্ছেন। জমি তৈরি ও চারা লাগানোর পর জমিতে সেচ মেশিনে পানি সেচ দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার বেশ কজন অগভীর নলকূপ মালিক জানান, তারা জমিতে সেচ বাবদ টাকা নিতে আগ্রহী নন। তারা আগের নিয়মেই জমির ফসলের ভাগ (অংশ) নেওয়ার চুক্তিতে পানি সেচ দিচ্ছেন। বাখুয়া, নাগরৌহা, ভেংড়ী গ্রামের বিভিন্ন মাঠের বহু সংখ্যক অগভীর নলকূপ মালিক জানান, তারা জমির ফসলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ (অংশ) নেওয়ার চুক্তিতে জমিতে পানি সেচ দিচ্ছেন। আবার দুএকজন চার ভাগের একভাগ চুক্তিতে পানি সেচ দিচ্ছেন।

নাগরৌহা গ্রামের উত্তরপাড়া মাঠে এবারের মৌসুমে বিদ্যুত চালিত ও ডিজেল চালিত গোটা বিশেক অগভীর সেচ মেশিন চলছে। সেচ মেশিন মালিকেরা জানান জমির ধান ফসলের পাঁচ ভাগের একভাগ নেওয়ার চুক্তিতে জমিতে পানি সেচ দিচ্ছেন। কোনো কাগজে নয়, মুখের চুক্তিতে জমিতে পানি সেচ দিচ্ছেন। সেচ মেশিন মালিক কৃষক সোহরাব মিয়া বলেন, সেচ বাবদ পাঁচ ভাগের একভাগ ফসল নেওয়ার চুক্তিতে গত কয়েক বছরের বছরের মতো এবারেও জমিতে পানি সেচ দিচ্ছেন। তার কথায় একই এলাকার অন্য সেচ মেশিন মালিকেরা সেচ বাবদ টাকা নিলে তিনিও জমিতে পানি সেচ বাবদ টাকা নেবেন। কৃষক করিম মিয়া বলেন, ফসলের ভাগ নেওয়া অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। বোরো ধান আবাদে সেচ বাবদ আশেপাশের এলাকায় একই মাঠে টাকা নেওয়া হলে এতে তার এলাকায় কারো সেচ বাবদ টাকা নিতে কোনো আপত্তি কিংবা অনীহা থাকবে না। ছোটো বাখুয়া গভীর নলকূপের মালিকেরা সেচ বাবদ ফসলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ নিচ্ছেন বলে জানানো হয়।

বিএডিসি (পানাসি সেচ উন্নয়ন প্রকল্প) উল্লাপাড়া জোনের সহকারী প্রকৌশলী ও উপজেলা সেচ কমিটির সদস্য সচিব জাহিদ হাসান বলেন, বোরো ফসলের আবাদে জমিতে পানি সেচ বাবদ টাকা নেওয়ার বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র জারী করা হয়েছে। উপজেলা সেচ কমিটি জমিতে পানি সেচ বাবদ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। তার বিভাগ থেকে বোরো ধানের জমিতে পানি সেচ বাবদ টাকা নেওয়ার বিষয় এবং সেচ ভাড়া বাবদ বিঘা প্রতি নির্ধারিত টাকার হার জানিয়ে মাইকিং ও লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। শিগগরিই গোটা উপজেলায় ব্যাপকভাবে প্রচার চালানো হবে। প্রতিটি সেচ মেশিনের ঘরের সামনে সেচ বাবদ টাকা নেওয়ার হার টানানো ও সেচ বাবদ রশিদ মূলে টাকা আদায় করতে হবে বলে তিনি আরো জানান ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি মোঃ উজ্জল হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, সরকারি নীতিমালা মোতাবেক বোরো ধান আবাদে জমিতে পানি সেচ বাবদ সব ধরণের সেচ মেশিন মালিকেরা কৃষকদের কাছ থেকে রশিদ মূলে নির্ধারিত হারের টাকা নেবেন। উপজেলা সেচ কমিটি থেকে সেচ বাবদ বিঘা প্রতি টাকার হার বেধে দেওয়া হয়েছে। বোরো ধান আবাদে জমিতে পানি সেচ বাবদ কৃষকদের কাছ থেকে ফসলের অংশ নেওয়ায় আবাদকারী কৃষকদের ক্ষতি বলতে লোকসান হয়ে থাকে। বোরো ধান ফসলের জমিতে সেচ বাবদ টাকা না নিয়ে ফসলের অংশ নেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেলে তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এরই মধ্যে সেচ কমিটির পক্ষ থেকে সেচ বাবদ টাকা নেওয়ার বিষয়ে প্রচার প্রচারণা চালানো শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন কৃষক সমাবেশে বিষয়টি কৃষকদেরকে জানানো হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সিরাজগঞ্জ,উল্লাপাড়া,সেচ,নলকূপ মালিক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close