সিরাজুল ইসলাম আপন, ভাঙ্গুড়া (পাবনা)

  ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ইটভাটায় পুড়ছে শিশুর স্বপ্ন

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ইটভাটায় কাজ করছে শিশু শ্রমিক

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। শিশুশ্রম আর শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আইনি বিধান থাকলেও নেই কোনো প্রয়োগ। ইটভাটায় পুড়ছে ১০-১৪ বছরের শিশু শ্রমিকের স্বপ্ন। উপজেলার বিভিন্ন ইটের ভাটা, দোকানপাট, গণপরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁ, কাচাবাজার, বাসাবাড়িতে দারিদ্র্যের কারণে এসব শিশু শিক্ষার আলো থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শিশু শ্রমিকরা পেটের তাগিদে অল্প বেতনে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ফলে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কার্যক্রম।

সচেতন নাগরিকরা অভিযোগ করে জানান, শিশুশ্রমের প্রধান কারণ দারিদ্র্য। বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনায় অনেক শিশু শ্রমিক চিরজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। শিশুদের স্কুলে নিয়ে আসা ও ধরে রাখার জন্য ব্যাপকহারে উপ-বৃত্তি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি থাকলেও ভাঙ্গুড়া উপজেলায় শিক্ষা বিভাগে তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা চোখে পড়ে না। ফলে যে বয়সে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার কথা, সে বয়সের শিশুরা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ ও অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে। এ উপজেলায় দরিদ্র হতভাগ্য এই শিশু শ্রমিকদের পুনর্বাসনে সরকারি বেসরকারি সংস্থাগুলোর পর্যাপ্ত কোনো উদ্যোগ নেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দরিদ্রতার জালে আবদ্ধ এসব শিশু বিভিন্ন ইটের ভাটা, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, ক্ষুদ্র কারখানা, হোটেল, রেস্তোরা, চা-দোকান, ওয়ার্কশপ, পুরান গাড়ি মেরামত, ফার্নিচার, মিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কঠোর পরিশ্রমের কাজ করছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। নসিমন-করিমন, রিকশা, ভ্যান চালানো, বাস-ট্রাক, পিকআপ ও বিভিন্ন ধরনের গাড়ির হেলপার, ইট-পাথর ভাঙা, ওয়েল্ডিং'র কাজসহ নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ফলে শিশুরা অল্প বয়সে লেখাপড়ার পরিবর্তে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে।

দারিদ্র্যের কারণে এ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দিনের পর দিন অস্বাভাবিকভাবে শিশু শ্রমিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও ভাঙ্গুড়ায় এ আইন লঙ্ঘন হচ্ছে। ফলে লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকারও। তাছাড়া পরিবার পরিকল্পনার বড় ধরনের প্রচার থাকলেও তা বাস্তবায়ন খুবই কম। যার কারণে জনসংখ্যার হারও বেড়ে চলেছে। প্রতি বছরই দারিদ্র্যের কারণে শতশত শিশু ¯ু‹ল থেকে ঝরে পড়ে। তাদের বেশিরভাগের মা-বাবা দরিদ্র ও নিরক্ষর।

সূত্র মতে, সরকার ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য ও উপবৃত্তি প্রকল্প চালু করলেও বেশির ভাগ এলাকায় শিশুদের ব্যাপকভাবে শিক্ষামুখী করা যাচ্ছে না মূলত নানা কারণে। আন্তর্জাতিক নীতিমালা শিশু শ্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকলেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বন্যা, অনাবৃষ্টি, নদী ভাঙন, কৃষি উপকরণ ও দ্রব্যমূল্য উধর্বগতি, অর্থনৈতিক সংকট, দারিদ্র ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শিশুরা তাদের শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। অপরদিকে যে সমস্ত শিশু আজ জীবিকার সন্ধানে জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে হাড়ভাঙা শ্রম দিচ্ছে তার বেশির ভাগই শিশু নির্যাতিত নিপীড়িত।

শিশু শ্রম সর্ম্পকে একাধিক সমাজ সচেতন নাগরিকের সঙ্গে আলাপ করলে তারা সকলেই প্রায় একই কখা বলেছেন। তারা আরো জানায়, শিশু শ্রমিকের বেতন তুলনামুলক ভাবে কম হওয়ায় ও কাজে ফাকি না থাকায় সকলেই এদের কাজে নিয়োগ করতে আগ্রহী। পেটের দায়ে শিশুরা ১২-১৬ ঘন্টা শ্রম দেয়। জীবনে বাঁচার তাগিতে এসব শিশু শ্রমকি ১২-১৬ ঘন্টা শ্রম বিক্রি করে ভবিষৎ কর্ম দক্ষতা নষ্ট করে ফেলছে। অল্প বয়সে পরিশ্রম করার ফলে অনেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্ধ বা পঙ্গুগুত্ব বরণ করছে। এমনকি আবার অনেকেই মৃত্যুবরণ করছে।

এ বিষয়ে ইউএনও মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, শিশুদের শ্রমে নিয়োগ বে-আইনি ও নিন্দনীয় কাজ। পরিবারের সদস্যদের মাঝেও এ ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এ উপজেলায় অনেক আগের তৈরিকৃত ১১ জন শিশু শ্রমিকের তালিকা থাকলেও এখন তা শতাধিক ছাড়িয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের আমরা পুনর্বাসন দেওয়ার চেষ্টা করছি।

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শিশু শ্রমিক,ইটভাটা,ভাঙ্গুড়া
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close