মো. শাহ আলম, খুলনা

  ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

খুলনায় গ্যাসের দামে স্বেচ্ছাচার 

ছবি : সংগৃহীত

মাত্র দুই দিন আগে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম একলাফে ২৬৬ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এতে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা। কিন্তু এই দামেও বাজারে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি দরের চাইতেও ১০০/১৫০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে গ্যাস। দাম নিয়ে এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। তারা বলেছেন, খুলনায় গ্যাসের দামে স্বেচ্ছাচার চালাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, গত দুই সপ্তাহ ধরে এলপি গ্যাসের বাজারে সংকট চলছিল। ২৬৬ টাকা দাম বাড়বেÑ এই সংবাদ আগাম জানতে পেরে বাজার থেকে গ্যাস সরিয়ে ফেলে কোম্পানিগুলো। এ সময় টাকা দিয়েও গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়া যায়নি। অবশ্য ২ ফেব্রুয়ারি দাম বৃদ্ধির পর বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। কিন্তু তারপরও গ্যাস বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে।

জানা গেছে, সমন্বয়ের নামে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে এলপিজির দাম একলাফে ২৬৬ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এতে প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা, যা জানুয়ারি মাসে ছিল ১ হাজার ২৩২ টাকা। সংস্থাটি প্রতি মাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ করে। তবে তা সব জায়গায় কার্যকর হতে দেখা যাচ্ছে না।

নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও ১৬০০ টাকার নিচে গ্যাস নেই। কোথাও ১৬৫০, কোথাও ১৭০০ টাকায়ও গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা ছাড়াও আশপাশের পৌরসভা, উপজেলা ও গ্রামে বিপুলসংখ্যক মানুষ এলপিজির ওপর নির্ভরশীল।

নগরীর গোবরচাকা এলাকার বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, সরকার ২৬৬ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করেছে দেড় হাজার (১,৪৯৮) টাকা। কিন্তু দোকানে কিনতে গেলে দাম চাইছে ১৭০০ টাকা। অনেক তর্কবিতর্কের পরে ৫০ টাকা কমে ১৬৫০ টাকায় গ্যাস কিনেছি।

নিরাপদ সড়ক চাইয়ের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান মুন্না জানান, তিনিও ১৫০ টাকা বেশি দিয়ে ১৬৫০ টাকায় গ্যাস কিনেছেন। নগরীর শেখপাড়া এলাকার বাসিন্দা ইকবাল হাসান জানান, সরকার পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের জন্য ৪০/৫০ টাকা মুনাফা রেখেই দাম নির্ধারণ করে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা যদি ১ হাজার ৪৯৮ টাকায় গ্যাস বিক্রি করে, তাতেও তাদের ৫০/৬০ টাকা প্রতি সিলিন্ডারে লাভ থাকে। কিন্তু এই লাভে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেন না। খুচরা ব্যবসায়ীরা আরো ১০০/১৫০ টাকা লাভ করতে চান।

তিনি বলেন, মাত্র ১৪০০ টাকা বিনিয়োগ করে ১৫০/২০০ টাকা মুনাফা খোঁজার যে লোভ এটাই গ্রাহকদের পকেট ফাঁকা করে দিচ্ছে। কিন্তু এসব দেখার কেউ নেই।

বটিয়াঘাটার মোহাম্মদ নগর এলাকার বাসিন্দা আকরামুল ইসলাম বলেন, তার পাঁচ সদস্যের পরিবারে মাসে দুই সিলিন্ডার এলপিজি লাগে। এতে খরচ হয় তিন হাজার টাকা।

তিনি বলেন, গত মাসে তিনি প্রতি সিলিন্ডার (১২ কেজি) গ্যাস কিনেছেন ১৩৫০ টাকা দিয়ে। এখন ১ হাজার ৬৫০ টাকা চাইছে। এভাবে গ্রাহকরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। নগরীর বকশিপাড়া এলাকার খুচরা গ্যাস ব্যবসায়ী আবু সাঈদ বলেন, তিনি প্রতি সিলিন্ডার ১৭০০ টাকা করে বিক্রি করছেন। দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার ১৪৯৮ টাকা নির্ধারণ করলেও তাদেরকে অতিরিক্ত মূল্যে কিনতে হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই বর্ধিত মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে।

নগরীর ময়লাপোতা এলাকার খাজা এন্টারপ্রাইজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গ্যাস কোম্পানি থেকেই তাদেরকে ১৫২০ টাকা দরে প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে। এর মধ্যে তারা যমুনা ১৬০০ টাকা এবং বেক্সিকো, ওমেরা ও বসুন্ধরা ১৬৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
খুলনা,খুলনায় গ্যাসের দাম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close