এম. টুকু মাহমুদ, হরিণাকুণ্ডু (ঝিনাইদহ)

  ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ভুক্তভোগির বয়ান 

যে ভূমি অফিসে টাকা ছাড়া কাজ হয় না

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কাপাশহাটিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও তিনি অফিসে কাগজপত্রের কাজ করে দেওয়ার নাম করে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। নামে অফিস সহায়ক হলে কী হবে টাকার বিনিময়ে তিনি করে দেন পর্চা, নাম জারি, খাজনা আদায়সহ নানা কাজ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন ওই ভূমি অফিসে ঘুষের টাকা ছাড়া কোনও কাজ হয় না।

একাধিক সূত্রের তথ্যমতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার কাপাশহাটিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারী অফিস সহায়ক মো. আব্দুস সাত্তার সুযোগ পেলেই, সরকারি ফি’র অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে জমির (মিউটেশন) নাম জারি করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে এই ধরনের কর্মকাণ্ড করে থাকে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন হলো, তিনি তো অফিস সহায়ক তাহলে এই ধরনের কাজের নাম ভাংগিয়ে মোটা অংকের টাকা নেয়, তাহলে কাজটি কে করে দেয় ?

শাখারিদাহ বাজার পাড়া গ্রামের মৃত্যু তক্কেল বিশ্বাসের স্ত্রী আয়না খাতুন বলেন, আজ থেকে আট নয় মাস আগে আমি আমার জমির কাগজপত্র ঠিক করতে কাচারিতে যাই। ওই অফিসের সাত্তার নামের এক জন আমাকে বলে ভাবী কী কাজ করবেন? আমি লেখাপড়া জানি না, তাই আমার বিষয়টা তাকে বললে তিনি আমাকে বলে ভাবী টাকা ছাড়া কাজ হয় না। আপনার এই জমির কাজ করতে হলে ৯ হাজার টাকা লাগবে। আমি তখন বললাম ভাই আমার কাছে এতো টাকা নেই। দামাদামী করার এক পর্যায়ে আমি ৬ হাজার টাকা দিয়ে কাজটি করতে বাধ্য হই। আমার স্বামী নেই। অভাবেব সংসারের খরচ মিটিয়ে আমি তাকে ৬ হাজার টাকা দিলেও তিনি আমার জমির কাগজ পত্র ঠিকও করে দেয় না, আবার টাকাটাও ফেরত দেয় না।

সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহের সময়ে হঠাৎ চুল দাঁড়ি পাকাওয়ালা এক লোক এসে হাজির। তিনি জানান, জমির নাম পত্তনের জন্য আমি কয়েকদিন ঘুরার পর ঐ অফিসের সাত্তার আমাকে বললো আমি করে দিবানে। সাত্তার আমার কাছ থেকেও তিন হাজার পাঁচ শত টাকা নিয়েছেন। টাকাও ফেরত দেয় না, আবার কাজও করে দেয় না। অনেক ঘুরাঘুরির পরে ১ হাজার টাকা ফেরত দেয় আমি এখনো ২৫’শ টাকা পাবো বলে জানান একই গ্রামের মৃত্যু ইলাহী বক্স বিশ্বাসের ছেলে তোফাজ্জেল বিশ্বাস।

জমির (মিউটেশন) নাম জারি অনলাইন পদ্ধতিতে হয়ে থাকে আপনি কি তা জানেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমরা মূর্খ মানুষ এসব কথা আমাদের কেউ বলে নি। এই প্রতিবেদন লেখার পরের দিন ২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ভূমি অফিসের সাত্তার ঐ ভূক্তভুগীর ৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে আসে বলেও জানা গেছে।

উক্ত বিষয়ে কাপাশহাটিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের, অফিস সহায়ক সাত্তার হোসেন অভিযোগের বিষয় প্রথমে স্বীকার করেন। পরে আবার তিনি কারো কাছ থেকে কোনও টাকা পঁয়সা নেয়নি সেটাও বলেন। আবার নিজ মুখে বলেন,কই ঐ মহিলার টাকা তো বৃহস্পতিবার দিয়ে দিয়ে দিয়েছেন।

এ ঘটনায় উপজেলার কাপাশহাটিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার (সহকারী ভূমি কর্মকর্তা) মো. সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সব কাজ যখন করেছিলো তখন আমি দৌলতপুর ভূমি অফিসে ছিলাম। কারো কাছ থেকে কোনও টাকা পঁয়সা নিয়েছেন কিনা আমার জানা ছিলোনা।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভারপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভুমি) সুস্মিতা সাহা সাংবাদিকদের জানান, জনসাধারণ যাতে ডিজিটাল সুবিধা ভোগ করতে পারে সেজন্য খুব শিগ্রহী জমির (মিউটেশন) নাম জারি অনলাইনে করা হয় মর্মে মাইকিং করা হবে। তাছাড়াও ঐ ঘটনার সত্যতা যাচাই পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান উপজেলার এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ভুক্তভোগী,ভূমি অফিস
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close