এইচ আর তুহিন, যশোর

  ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩

যশোরে বিষাক্ত স্পিরিট পানে ঝরছে প্রাণ

প্রতীকী ছবি

যশোরে একের পর এক বিষাক্ত স্পিরিট পানে (নেশাজাতীয় দ্রব্য) প্রাণ ঝরছে। গত তিন বছরে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার মারা গেছেন তিনজন। এর মধ্যে একজনের ময়নাতদন্ত করা হলেও অন্যজনকে নিয়ে গোপনে দাফন করেন স্বজনরা।

এসব ঘটনায় তাৎক্ষণিক তোলপাড় হলেও পরে থিতিয়ে যায় প্রশাসনের তৎপরতা। পরবর্তী সময়ে অবৈধ স্পিরিট কেনাবেচা ও চোলাই মদ প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা দৃশ্যমান হয়নি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক হুমায়ন কবির খন্দকার বলেন, আগের মৃত্যুর কোনো তথ্য নেই। তবে সর্বশেষ তিনজনের মৃত্যুর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য মিলেছে। হোমিওপ্যাথিক দোকান থেকে তারা রেকটিফায়েড স্পিরিট কিনে পান করেন বলে জানতে পেরেছি। রবিবার (২৯ জানুয়ারি) অভিযান চালানো হবে। এজন্য তিনজনের মৃত্যু নিয়ে এর বেশি বলতে চাই না।

তবে অন্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দোকানে রেকটিফাইড স্পিরিট বিক্রি করতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু যশোরের কোনো হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দোকানের সেই অনুমোদন নেই। এ বিষয়ে সম্প্রতি হোমিওপ্যাথিক ওষুধ বিক্রেতা সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অনুমোদন নিতে বলা হয়েছে।

স্থানীয়, যশোর জেনারেল হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ জানুয়ারি রাতে যশোর সদরের আবাদ কচুয়া গ্রামের একটি বাগানে এই গ্রামের ইসলাম হোসেন, আবুল কাশেম ও জাকির হোসেন এবং সিতারামপুর গ্রামের বাবলু হোসেন ও রিপন হোসেন নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করেন। তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নেন। অবস্থার অবনতি হলে ইসলামকে ২৬ জানুয়ারি তথ্য গোপন করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তিনি মারা যান। পরিবারের সদস্যরা দ্রুত ছাড়পত্র ছাড়াই মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যান। অন্য চারজনও অসুস্থ হয়ে পড়লে শুক্রবার সকালে তারা একে একে যশোর হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে জাকির হোসেন দুপুর পৌনে ১টার দিকে মারা যান। এরপরই নেশাজাতীয় দ্রব্য পানের বিষয়টি জানাজানি হয়। ঘটনা জানাজানি হলে বাবলু ও রিপন হোসেন নিজেদের আড়াল করতে হাসপাতাল ছেড়ে বেসরকারি ক্লিনিকে চলে যান। আর শুক্রবার রাতে মারা যান আবুল কাশেম।

যশোর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আবদুর রশিদ জানান, গত দুই দিনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের অসুস্থ অবস্থায় স্বজনরা তথ্য গোপন করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। রোগীদের মুখ থেকে নেশাজাতীয় দ্রব্য পানের গন্ধ বের হলে জানাজানি হয়।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত বা বিষাক্ত স্পিরিট পান করার কারণে তারা মারা গেছেন বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে। প্রথমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা অন্য কেউ তাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। দুজনকে গোপনে দাফন করা হয়েছে। আর কাশেমের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগতব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এর আগে ২০২০ সালের ১৭ জুন যশোরের ঝিকরগাছায় স্পিরিট পান করে রাজাপুর গ্রামের হাবিল গাজী ও নুর ইসলাম খোকা, বর্নি গ্রামের ফারুক হোসেন, হাজিরালী গ্রামের আসমত আলী, পুরন্দরপুর গ্রামের হামিদুর রহমান এবং ঋষিপাড়ার নারায়ণ মারা যান।

একই বছরের ২৫ ও ২৬ এপ্রিল নেশাজাতীয় দ্রব্য পানে ১০ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে যশোর সদর উপজেলার শেখহাটি কালীতলা এলাকার শাহিন, যশোর শহরের বেজপাড়ার নান্নু, শহরতলীর ঝুমঝুমপুর মান্দারতলার ফজলুর রহমান, শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের মনিবাবু, ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের সাবু, যশোর শহরের বারান্দী মোল্যাপাড়ার বাসিন্দা মদের দোকানের কর্মচারী আবদুর রশিদ, চুড়ামনকাটির ছাতিয়ানতলার আক্তারুজ্জামান, ঝিকরগাছার কাটাখালি গ্রামের সাহেব আলী, মনিরামপুরের মোহনপুর গ্রামের মোমিন ও মোহনপুরের মুক্তার আলী মারা যান।

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
যশোর,বিষাক্ত স্পিরিট,মৃত্যু
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close