যশোর প্রতিনিধি

  ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩

যশোর আইটি পার্ক এখন রিসোর্ট! 

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ককে রিসোর্টে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজস্ব বাড়াতে পার্ক কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে তৃতীয় পক্ষকে সাবলিজ দিয়েছে। তবে বিষয়টি নেতিবাচকভাবে দেখছেন আইটি খাতের বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও পার্ক স্থাপনের নেপথ্যের কারিগররা।

এদিকে সাবলিজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি বৃহস্পতিবার পার্ক চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও সম্পন্ন করেছে। তারা জানান, এখানে তিন তারকা মানের হোটেল ও ক্যাফেটেরিয়া করা হবে। আর পার্কের অভ্যন্তরের লেকটিকেও রিসোর্টের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিনিয়োগকারী জানান, সরকার এই প্রতিষ্ঠানটি করতে ৩০৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ১৫ বছরের জন্য পার্কটি পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে টেকসিটিকে। ২০১৭ সালে তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী মোট রাজস্বের ১৮ শতাংশ পাবে সরকার। বাকি ৮২ শতাংশ পাবে টেকসিটি। এমন চুক্তির কারণে ব্যবস্থাপনা কোম্পানিটির লোকসানের কোনো সুযোগ নেই। অথচ তারা অতি লাভের আশায় পার্কটিকে বিয়ে বাড়িতে পরিণত করেছে। আর আজ তারা পার্ককে ঘিরে বিনোদন কেন্দ্র খোলার সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে। ব্যবস্থাপনা কোম্পানিটি খান প্রোপার্টিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে তিন তারকা মানের হোটেল ও ক্যাফেটেরিয়াটি ১০ বছরের জন্য সাবলিজ দিয়েছে। তারা নাম পরিবর্তন করে ‘যশোর আইটি পার্ক হোটেল এন্ড রিসোর্ট’ নামে ঘটা করে তাদের কার্যক্রমের উদ্বোধন সম্পন্ন করে বৃহষ্পতিবার।

তিনি আরো বলেন, এ পার্কের কোনো বিনিয়োগকারী এমন উদ্যোগে খুশি নয়। আইসিটি খাতের বিনিয়োগকারীদের বিকাশের জন্য প্রতিষ্ঠানটি গড়া হলেও একে ঘিরে ব্যবসায় মেতেছে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কোম্পানি টেকসিটি বাংলাদেশ লিমিটেড।

যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ককে রিসোর্টে রূপান্তরের উদ্যোগকে ভালো চোখে দেখছেন না আইটি খাতের বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও পার্ক স্থাপনের নেপথ্যের কারিগররা। আইটি বিশেষজ্ঞ ঢাকাস্থ অভো টেকনোলজির সিইও যশোরের সন্তান খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, এ খবর তো আমি জানতামই না। আপনার কাছেই শুনলাম। এটা খুবই হতাশাজনক। দেশের বড় ছোট অনেক বিনিয়োগকারী এ পার্কে অফিস নিয়ে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে। তাদের জন্য এটা অনেক বড় দুঃসংবাদ। দেশের প্রথম সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক এটি, সেটা যদি রিসোর্ট হয়ে যায় তাহলে সেটা একটা বড় দুর্ঘটনাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশের যে রূপরেখা ছিল সেটা হোঁচট খাবে।

যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন সাবেক শিক্ষা সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান ওরফে এন আই খান। তিনি বলেন, আমার জন্য এই খবরটি একটি দুঃখজনক ব্যাপার। আইটি পার্কে বিয়ে হবে, সেটিকে রিসোর্টে রূপান্তরিত করা হবে। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছুই নেই। তিনি আরো বলেন, রাজস্বের জন্য কি রিসোর্ট করতে হবে? রাজস্ব আয়ের বিকল্প কি কোন পথ নেই? কী আর বলবো।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর আনোয়ার হোসেন বলেন, এটা কোনো ভাল উদ্যোগ নয়। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামে দেশের প্রথম সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। আইটি খাতের বিকাশে এটাকে পার্ক হিসেবেই ধরে রাখতে হবে। এর জন্য যা যা করণীয় সরকারি কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্টদের সেই সব উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। সেখানে আইটি পার্ককে বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত করা কোনো সুখকর বিষয় নয়। পার্কটি যাতে কার্যকর হয় সেই উদ্যোগ জরুরি ভাবে নিতে হবে। এই পার্ক থেকে একাডেমিক বেনিফিট পেতে পারি। এই অঞ্চলে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে তার শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।

সাব লিজ পাওয়া খান প্রোপার্টিজের চেয়ারম্যান মাসুদুর খান বলেন, আমরা ১০ বছরের জন‌্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। আইটি পার্কের হোটেলকে ঘিরে রিসোর্টের সেবা দিতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ ওপেন হাউজ হল। পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে পুরোপুরি অপারেশনে যাব আমরা।

ব্যবস্থাপনা কোম্পানি তৃতীয় পক্ষকে সাবলিজ দিতে পারে কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, চুক্তিতে তাদের সে অধিকার দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া শুরুতে পরিকল্পনা ছিল বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসবে, পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা এ পার্কে ব্যবসা করবেন। পার্কটি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকবে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে তা হয়নি। যশোরের মতো জায়গায় সরকার আন্তর্জাতিক মানের চমৎকার হোটেল ও ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণ করেছে। এটা ব্যবহার উপযোগী হওয়া উচিত। এটা আপডেট করে আমরা যদি সুন্দরভাবে চালাতে পারি তাহলে তা সরকারের জন্যই ভালো। এতে আমাদের রাজস্ব আয় বাড়বে।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী এত সুন্দর একটা স্থাপনা করেছেন। সেখানে লোকজন কম গেলে রেভিনিউ কম আদায় হয়। রেভিনিউ কম হলে তার উপর নজর কম থাকে। ফলে এটাকে রিভার্স করা হচ্ছে। প্রচুর মানুষ আসবে। রাজস্ব আদায় বাড়বে। দেখতেও সুন্দর লাগবে। আমাদের ইনভেস্টরাও কম ভাড়ায় থাকতে পারবে।

তিনি বলেন, যেটা হচ্ছে ভালই হচ্ছে। আমরা চাই-পার্কটিকে ঘিরে চমৎকার একটি রিসোর্ট হোক। পাশে যে লেকটি আছে সেখানে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হবে, স্পিড বোর্ড নামানো হবে। নয়নাভিরাম করে গড়ে তোলা হবে। এতে তো সমস্যা হওয়ার কথা না। আপনাদের তো খুশি হওয়ার কথা। এখানে একসাথে দুটোই হবে। উদ্যোক্তারা ব্যবসা করবেন এবং বিনোদন পিপাসুরা এখানে এসে খুশি হবেন।

যশোরে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে দেশের প্রথম আইটি পার্ক শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। শহরের নাজির শঙ্করপুর এলাকায় ১২ একরের জমিতে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়ন, জ্ঞানভিত্তিক শিল্প স্থাপন, উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি। এজন্য পার্কের তিনটি ভবনে বিনিয়োগকারীদের জন্য ইজারাযোগ্য ১ লাখ ৩৭ হাজার বর্গফুট জায়গা এবং আবাসন, সম্মেলন, মেলা আয়োজনসহ নানা সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
যশোর,আইটি পার্ক,রিসোর্ট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close