কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

  ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩

অস্তিত্ব রক্ষায় আদিবাসীদের নয় দফা

মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আদিবাসী অধিকার সুরক্ষা নাগরিক কমিটির নেতারা। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

ঝিমাই খাসি পুঞ্জির শতবর্ষী প্রাকৃতিক গাছ কাটা বন্ধ, ঐতিহ্যবাহী পানজুম, পরিবেশ-প্রাণ-প্রকৃতি, আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা, প্রথাগত ভূমির মালিকানা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, অস্তিত্ব রক্ষার্থে দাবি জানিয়েছে বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী অধিকার সুরক্ষা নাগরিক কমিটি। বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নয় দফা দাবি জানান তারা। একইসঙ্গে দাবির প্রতি সমর্থন জানায় কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন।

দাবিগুলো হলো, ঝিমাই খাসি পুঞ্জির পান জুমের প্রাকৃতিক গাছ বিধি বহির্ভূতভাবে কাটার পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে। ঝিমাই পুঞ্জির যাতায়াতের রাস্তায় চা বাগান কর্তৃপক্ষের সকল বাধা অপসারণ করতে হবে। ডুলুকছড়া, বেলকুমা, নুনছাড়াসহ বিভিন্ন পুঞ্জির আদিবাসীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সামাজিক বনায়নের আড়ালে প্রভাবশালী ভূমিখেকোদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। আদিবাসীদের ভোগ দখলীয় প্রাকৃতিক বনভূমিতে কোন প্রকার সামাজিক বনায়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। খাসিয়া পানচাষ পদ্ধতিকে বিশেষ কৃষি ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে উৎপাদন ও বিপণনের সকল পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। বিনা সুদে কৃষি ঋণ ও পানের ন্যায্য বাজার মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। আদিবাসীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিশুদ্ধ পানি, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগ প্রভৃতি নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমির মালিকানা ও শান্তিপূর্ণ ভোগদখল নিশ্চিত করতে হবে। বৃহত্তর সিলেটের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধানের লক্ষে বিশেষ ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে। পান চাষের একমাত্র অবলম্বন প্রাকৃতিক গাছ কেটে আদিবাসীদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলি তালাং বলেন, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ঝিমাই পুঞ্জির সঙ্গে ঝিমাই চা বাগান কেদারপুর টি কোম্পানি লিমিটেডের চলমান ভূমি বিরোধ, ঝিমাই চা বাগান কর্তৃক ঝিমাই পুঞ্জির পানজুমের আওতাধীন প্রায় দুই সহস্রাধিক প্রাকৃতিক গাছ কাটার প্রচেষ্টা চলছে। পুঞ্জিতে ৭২টি খাসিয়া পরিবারের বসবাস, যাদের সবারই পেশা পান চাষ। আদিবাসীদের বসতভিটা, বিদ্যালয়, গির্জা, কবরস্থান সর্বোপরি তাদের জীবন জীবিকা বিপন্ন হওয়ার আশংকা তৈরি হওয়ায় আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জনক দেববর্মা বলেন, মৌলভীবাজার জেলার পাহাড়ি বনাঞ্চলে প্রায় ৮০টি খাসি পুঞ্জি রয়েছে। যেখানে প্রধানত খাসি ও গারো আদিবাসীরা স্মরণাতীত কাল থেকে প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। প্রায় প্রতিটি পুঞ্জিতেই সহস্রাধিক বাঙালি জনগোষ্ঠী পান চাষ, সংগ্রহ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এবং রোজগারের একমাত্র অবলম্বন। আদিবাসীদের ভোগ দখলীয় এই বনভূমি কাগজে পত্রে জেলা প্রশাসক এবং বন বিভাগের নামে হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন যাবত বন বিভাগ ও চা বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমা, বন বিভাগ কর্তৃক খাসিদের উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে মিথ্যা বন মামলা দায়ের করে হয়রানি, খাসিদের ভোগ দখলীয় প্রাকৃতিক বনে সামাজিক বনায়ন প্রকল্প গ্রহণ করে স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিখেকোদের সম্পৃক্ত করে আদিবাসীদের সঙ্গে সংঘাতময় পরিস্থিতি এখানকার বর্তমান বাস্তব চিত্র।

পিডিএস/এমএইউ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঝিমাই খাসি পুঞ্জি,শতবর্ষী প্রাকৃতিক গাছ,পানচাষ,আদিবাসী
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close