গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ
দই মেলা, হাঁকডাকে মুখরিত প্রাঙ্গণ
সরস্বতী পূজা উপলক্ষে সিরাজগঞ্জ ও তাড়াশে প্রায় ২০০ বছরে ধরে ঐতিহ্যবাহী দই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দই মেলা হলেও এখানে খই, চিড়া, মুড়ি, মুড়কি, বাতাসা, কদমা ও নানা ধরনের খাবার বেচাকেনা হয়। সকাল থেকে দই মেলায় ভিড় করতে থাকেন ক্রেতারা।
সিরাজগঞ্জের ঘোষরা তৈরি করেন হরেকরকমের দই মিষ্টি। এখানকার তৈরি দই আকর্ষণীয় খেতেও সুস্বাদু। শ্রীপঞ্চমী তিথি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই তিথিতে শিক্ষার্থীরা ভক্তি সহকারে মা সরস্বতীকে প্রদান করে পুষ্পাঞ্জলি। সিরাজগঞ্জের সনাতন ধর্মের মানুষ সরস্বতী মায়ের পূজায় ভোগ হিসেবে ফলমূলের পাশাপাশি দেন দই। এ সময় দূর-দূরান্তের আত্মীয়স্বজন আসেন বাড়িতে। সনাতন ধর্মাবলম্বীর মানুষের পাশপাশি মুসলিমরাও দই কেনেন।
জনশ্রুতি আছে তাড়াশের তৎকালীন জমিদার বনোয়ারি লাল রায় বাহাদুর প্রথম দইয়ের মেলার আয়োজন করেন। এছাড়া জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করা হতো। সে থেকেই জমিদার বাড়ির সামনে রসিক লাল রায় মন্দিরের পাশের মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী দই মেলার আয়োজন শুরু হয়।
প্রতি বছর মাঘ মাসে শ্রীপঞ্চমী তিথিতে দইমেলায় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর থেকে ঘোষেরা দই এনে পসরা সাজান। তবে এখন তিন দিন নয়, এক দিন বসে দইয়ের এই মেলা।
বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) ভোর থেকে সিরাজগঞ্জ শহরের মুজিব সড়ক এলাকায় শুরু হয় দই মেলা। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দই ব্যবসায়ীরা মেলায় এসেছেন। খিরখাশা, খিরশা, খাশা ইত্যাদি নামের ও ভিন্ন স্বাদের দই মেলায় উঠেছে। ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা মূল্যের ৪ কেজি ওজনের দইসহ হাঁড়ি বিক্রি হচ্ছে। ভোর থেকে ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গন। মেলা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
দই নিয়ে আসা এনায়েতপুরের রণজিত ঘোষ ও রামপ্রসাদ ঘোষ বলেন, ‘৫০ বছর ধরে এই মেলায় দই বিক্রি করে থাকি। আমার পূর্ব-পুরুষরাও এই মেলায় দই বিক্রি করে গেছেন। এবার ৫০০ হাঁড়ি দই এনেছি। দুপুরের মধ্যেই বেশিরভাগ বিক্রি হয়ে গেছে। গত বছরের চেয়ে এবার দইয়ের চাহিদাও রয়েছে বেশি।’
বেলকুচি উপজেলার রাজাপুর গ্রামের সুকুমার কুমার ঘোষ বলেন, দুধের দাম, জ্বালানি, শ্রমিক খরচ, দই পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে। তবে মেলা এক দিনব্যাপী হলেও চাহিদা থাকার কারণে কোনো ঘোষের দই অবিক্রিত থাকে না।
মেলায় দই কিনতে আসা জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট বীর মুক্তিযোদ্ধা সুকুমার চন্দ্র দাস বলেন, সিরাজগঞ্জ ও তাড়াশে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী দইয়ের মেলা বসেছে। প্রতি বছরই এই মেলায় প্রায় ১০০ মণ দই বিক্রি হয়।
পিডিএস/এমএইউ