কোরবান আলী, ঝিনাইদহ

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩

নারিকেল গাছের সারিতে প্রাণবন্ত সড়ক

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

মানুষ, পশুপাখিসহ সৃষ্টিকুলের সবাই বসবাস ও ঘোরাঘুরির উপযুক্ত পরিবেশ খোঁজে। অপরূপ সৌন্দর্যকে কে না উপভোগ করতে চায়? নয়নাভিরাম দৃশ্য মুগ্ধতা ছড়ায়। বিচ্ছিন্ন হৃদয় জোড়া লাগে। পাথর হৃদয়েও ঘর বাঁধে ভালোবাসা। ঝিনাইদহে এমন মুগ্ধতা ছড়ানো সড়ক হচ্ছে তেঁতুলতলা থেকে নলডাঙ্গা রাস্তা।

বর্তমান সড়কটি আলোচনায় এসেছে প্রশস্ত পিচের রাস্তা ও সারি সারি নারিকেল গাছের কারণে। কিন্তু ঝিনাইদহে তো সড়ক কতই আছে, সেখানে তো কেউ পরিবার-পরিজন বা প্রেমিক-প্রেমিকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে যান না। নলডাঙ্গা সড়কের সবুজ নারিকেল গাছ প্রশস্ত রাস্তাটিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। তাইতো বিকাল হলেই শহরের মানুষ সজিব নিঃশ^াস আর গ্রামীণ পরিবেশকে উপভোগ্য করে তুলতে ছুটে যান ঝিনাইদহ শহর থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরে নলডাঙ্গা সড়কে। ছায়াবিথী সবুজ মাঠ আর নির্জন প্রকৃতি হৃদয় কেড়েছে সবার। কিন্তু এই অপরূপ সৌন্দর্য বিলানো চমৎকার পরিবেশ যিনি গড়ে তুলেছেন তিনি হলেন নলডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের মৃত ছবেদ আলী বিশ^াসের ছেলে মো. আলাউদ্দীন। তার হাতের ছোঁয়ায় তেঁতুলতলা থেকে নলডাঙ্গা সড়কটি আজ মানুষের কাছে এত জনপ্রিয় ও সৌন্দর্যমন্ডিত। চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন ১৯৫১ সালে জন্মগ্রহণ করেন এক সম্ভান্ত পরিবারে। তার পিতাও ছিলেন চেয়ারম্যান। পরিবারটি এলাকায় জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী জনহিতকর কাজের জন্য। ১৯৯২ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর আলাউদ্দীন পরের বছর ১৯৯৩ সালে নলডাঙ্গা সড়কে ২ হাজার ৫০০টি নারিকেল গাছ রোপণ করেন। পরিচর্চা ও যত্নের পর মাত্র ৭০০ নারিকেল গাছ বেঁচে ছিল। এক সময় তা দৃশ্যমান হতে থাকে। পত্রপল্লবে বিকশিত হতে থাকে শত শত নারিকেল গাছ। মাঠের কৃষক আর রাখালের ছায়া হয়ে দাঁড়ায় গাছগুলো। প্রায় ২৯ বছর পর সৌন্দর্য প্রেমিকদের নজর কাড়ে নারিকেলের সারি সমৃদ্ধ ছায়াঘেরা সড়কটি। স্থানীয় মসজিদ কমিটি নারিকেল গাছগুলো দেখভাল করছেন।

আলাউদ্দীন জানান, ১৯৯২ ও ২০১২ পর্যন্ত তিনি ১৪ বছর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চেয়ারম্যান না হলেও ২০২২ সালে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে চার কিলোমিটারজুড়ে তালের বীজ বপন করেন। এলাকার মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির ও স্কুল উন্নয়নে তার অবদান রয়েছে। এলাকায় করেছেন ব্রিজ, কালভার্ট ও গ্রামীণ সড়ক। এখনো তিনি ছুটে চলেন এলাকার মানুষের কল্যাণে। তার হাতে লাগানো নারিকেল গাছগুলো প্রকৃতি প্রেমিকদের নজর কাড়ায় তিনি উচ্ছ্বাসিত ও গর্বিত। তিনি বলেন, প্রতিটি গ্রামীণ সড়কে এভাবে গাছ রোপণ করলে মানুষের মধ্যে ভালোবাসা জাগ্রত হয়। মলি খাতুন (ছদ্মনাম) নামে এক প্রেমিকা ঘুরতে আসেন এই সড়কে। তার মতো অনেকেই নারিকেল গাছের নিচে কেউ বা বিশাল প্রশস্ত মাঠে ধানের আইলে বসে গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন। তারা এমন পরিবেশ দেখে খুবই মুগ্ধ।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে সজীব হোসেন নামে এক যুবক কবির ভাষায় বলে ওঠেন, ‘প্রকৃতির উদার দান মানুষের তরে, হাজারো ডালিতে তার রূপের সৌন্দর্য ঝরে...।’

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক মাসুদ আহমেদ সনজু বলেন, কিছু অসৎ ও লোভী মানুষের কারণে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন। গাছপালা, বন জঙ্গল দিন দিন উজাড় হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। প্রকৃতিপ্রেমী আলাউদ্দীনের মতো কিছু মানুষ আছে বলেই এখনো আমরা বেঁচে আছি। আমাদের সবারই উচিত প্রতি বছর গাছ লাগানো।

পিডিএস/এইচএস

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নারিকেলের সড়ক,ঝিনাইদহ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close