রাজু আহম্মেদ, কুড়িগ্রাম

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩

চরাঞ্চলে শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে যান না, ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থী

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যান না। ফলে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের অভাবে দিন দিন বাড়ছে ঝড়ে পড়া শিশুর সংখ্যা। এ নিয়ে সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় অভিভাবকরা।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র মতে, জেলায় ১২ শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে নদ-নদী অববাহিকার চার শতাধিক চরাঞ্চলে ১৬৯টি বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে প্রায় ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এর মধ্যে সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের ছাট কালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর হলোখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সারডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক দুর্গম চরের অজুহাতে বিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হন না বলে জানা গেছে।

সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় সরেজমিনে সারডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহিনুর আখতার এবং সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস শিক্ষক মিলনায়তনে বসে আছেন। বিদ্যালয়জুড়ে শুধু প্রথম শ্রেণিতে তিনজন শিক্ষার্থী- আপেল, রঞ্জিনা ও সুমাইয়া। তারা বই খাতা নিয়ে বসে আছে। ক্লাসে কোনো শিক্ষক না থাকায় খেলাধুলায় ব্যস্ত এসব কোমলমতি শিক্ষার্থী।

সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন অপর দুই সহকারী শিক্ষক আরজু আরা ও মাহমুদা আখতার। সংবাদকর্মীদের দেখে ঘাবড়ে যান ওই দুই শিক্ষিকা। এই দুই শিক্ষক বিলম্বে এলেও হাজিরা খাতায় সকাল ৯টায় স্বাক্ষর করে উপস্থিতি দেখান।

এলাকার আজিজুল, মজিবর, মর্তুজা, খোকা, বজলার রহমানসহ আরো অনেকে বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুল আসেন না। মাঝে মধ্যে এলেও দেরিতে আসেন। এ কারণে বাচ্চারা পড়ালেখায় আগ্রহ হারাচ্ছে। অনেক ছাত্র-ছাত্রী ইতোমধ্যে স্কুল বিমুখ হয়েছে। কারণ ছাত্র-ছাত্রীরা সময়মত ক্লাসে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। শিক্ষকরা ক্লাসে না আসায় বিরক্ত হয়েই এখন শিশুরা স্কুল আসে না।’

দেরিতে আসার কারণ ব্যাখ্যায় সহকারী শিক্ষিকা আরজু আরা জানান, ‘তার নিকটাত্মীয়ের মৃত্যু জনিত কারণে বিদ্যালয়ে আসতে দেরি হয়েছে।’ বিদ্যালয়ে দেরিতে আসা অপর সহকারী শিক্ষক মাহমুদা আখতার বলেন,‘আমার বাড়ি হলোখানায়। স্কুল থেকে অনেক দূরে। যে কারণে স্কুলে আসতে দেরি হয়। তাছাড়া পারিবারিক কাজ সমাধান করে স্কুলে পৌঁছতে একটু আধটু দেরি হয়ে থাকে।’

দায়িত্বরত সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. ইয়াসিন আলী বলেন, ‘চর সারডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দেরিতে উপস্থিতির বিষয়টির অভিযোগ পেয়েছি।’

এ ব্যাপারে কথা হলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল ৯টার পর শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পিডিএস/এইচএস

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চরাঞ্চল,কুড়িগ্রাম,স্কুল,প্রাথমিক বিদ্যালয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close