মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম)

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩

কাকডাকা ভোরে বাঙ্গির হাট

ছবি : সংগৃহীত

কাকডাকা ভোরে সড়কের দুই পাশে শুরু হয় তরমুজ-বাঙ্গির হাট। দিনের আলো ফুটতে না ফুটতেই চাষিরা খেত থেকে তুলে হাটে নিয়ে আসেন তরতাজা তরমুজ বাঙ্গি, সঙ্গে অন্য ফসলও থাকে। ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখরিত হয়। হাট চলে রাত অবধি। এমন দৃশ্য দেখা গেছে, চট্টগ্রামের আনোয়ারা-বাঁশখালী উপজেলার মধ্যবর্তী শঙ্খনদীর ওপর নির্মিত তৈলারদ্বীপ সেতুর দক্ষিণ পাড়ে পশ্চিম পুকুরিয়া এলাকায়।

সেখানে দীর্ঘ সারিজুড়ে বসে সুস্বাদু ও পুষ্টি সমৃদ্ধ সবুজ হলুদ বাহারি রঙের মৌসুমি ফল বাঙ্গি ও তরমুজের হাট বসে। সড়কের দুই পাশে বাঙ্গির স্তূপ। কোলাহলমুক্ত পরিবেশে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে বাঙ্গি ও তরমুজের হাট।

ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাঙ্গু ব্রিজের পুবপাশে বাঁশখালী অংশে পিএবি প্রধান সড়কের দুই পার্শ্বেই নিয়মিতই বাঙ্গির হাট বসে। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকারি ক্রেতারা হাজির হন এই হাটে। আসেন আশপাশের এলাকার খুচরা ক্রেতারাও। যানবাহন থামিয়েও অনেক যাত্রী বাঙ্গি কিনে নিয়ে যান। সরাসরি ভোক্তার কাছে বাঙ্গি বেচে ন্যায্য দাম পেয়ে চাষির মুখে হাসির ঝিলিক। চাষিরা পেঁপে, পেয়ারা, লিচু ও আম জাম মিষ্টিকুমড়াসহ বিভিন্ন শাকসবজির পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে বাঙ্গির চাষ করছেন। বাঙ্গি চাষ অধিক লাভজনক ও ফলন বেশি হওয়ায় এ উপজেলার কৃষকরা দিন দিন এ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর তেমন বেশি ফলন হয়নি বলে স্থানীয়রা জানান।

বর্তমানে স্থানীয় বাজারে বড় আকারের বাঙ্গির দাম ২০০-৩০০ টাকা, মাঝারির দাম ১৫০-২০০ টাকা এবং ছোটটির দাম ৮০-১৪০ টাকা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিকল্প পিএবি প্রধান সড়ক দিয়ে আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া (আংশিক), পেকুয়া, চকরিয়া, কুতুবদিয়া-মহেশখালীসহ কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চলাচল করা যাত্রীরাও গাড়ি থামিয়ে কিনে নেন সুস্বাধু এসব ফল।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে পুকুরিয়া চাঁদপুর তৈলারদ্বীপ ব্রিজের দুই পাশে প্রধান সড়কে বাঙ্গি বিক্রি করতে আসা চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১১ সালের শুরুর দিকে প্রথম প্রথম কয়েকজন চাষি সড়কের ওপর বাঙ্গি রাখতেন স্তূপ করে। প্রতিনিয়ত পথচারীরা ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে কিনে নিয়ে যেতেন। তাদের দেখাদেখি অন্য চাষিরাও ওখানে বাঙ্গি ও তরমুজের হাট বসাতে শুরু করেন। এভাবে এই সড়কেই বিচরণ হতে থাকে বাঙ্গির হাট।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই মৌসুমে বাঁশখালী উপকূলীয় পুকুরিয়া, সাধনপুর, বানীগ্রাম, বাহারছড়া, গন্ডামারা, সরল, খানখানাবাদ, চাম্বল, নাপোড়া ও পুঁইছড়ি এলাকায় তরমুজ ও বাঙ্গির ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এ বছর ফলন হয়েছে ভালো। তবে আগাম তরমুজের চাহিদা ও দাম বেশি। তবে শেষের দিকে কমে আসবে বলেও জানান কৃষকরা।

পুকুরিয়ার চাঁনপুর এলাকার চাষি আবদুল মান্নান ও মো. ছগির বলেন, এ বছর কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবং পোকার উপদ্রপ কম থাকায় বাঙ্গির লাভজনক উৎপাদন হয়েছে। আর এই হাটের কারণে ভালো বাজার দর পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি বছরের মতো এ বছর আমরা মোটামুটি লাভবান হচ্ছি। তিনি আরো বলেন, আমরা আমরা ন্যায্যমূল্য বিক্রি করে লাভবান হচ্ছি। এখানকার বাঙ্গি অনেক সুস্বাদু। মানুষ অগ্রিম টাকা দিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে এসে বাঙ্গি ও তরমুজ ক্রয় করেন। গত সাত থেকে আট বছর যাবৎ এই সড়কে আমরা খুচরা দামে বিক্রি করি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই চলে বেচাকেনা। এতে বাজারে নিয়ে যাওয়ার ঝামেলা নেই।

চট্টগ্রাম শহর থেকে মহেশখালী যাওয়ার পথে কালমারচড়া এলাকার বাসিন্দা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমি প্রতি সপ্তাহে নিজ কর্মস্থল চট্টগ্রাম শহর থেকে মহেশখালী যাওয়ার পথে এইখান থেকে প্রতিনিয়ত বাঙ্গি ক্রয় করি। এখানকার বাঙ্গি অত্যন্ত মজার। দামেও কম। এখানে অনেক কম দামে ভালো বাঙ্গি পাওয়া যায়। তাই এই পথে যাতায়াত করার সময় সুযোগ থাকলেই বাঙ্গি কিনে নিই। আমার মনে হয় এই উপজেলার বাঙ্গি ও তরমুজের কদর সারা দেশেই। বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিসার আবু ছালেক বলেন, বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। যেকোনো সহযোগিতার জন্য আমরা কৃষকের পাশে আছি। অনেক কৃষক আমাদের থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা এবং পরামর্শ নিয়ে থাকেন। উপজেলার কয়েকটি এলাকার মাটি বাঙ্গি চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাঙ্গির হাট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close