গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
মুক্তিযোদ্ধার সম্পত্তি দখলের অভিযোগ
গোপালগঞ্জে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর শেখের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। মুক্তিযোদ্ধা জাফর শেখের সন্তানরা জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বারবার ধরনা দিয়েও সম্পত্তি ফেরত পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। উল্টো প্রভাবশালী মহলটি নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে মুক্তিযোদ্ধা জাফর শেখের সন্তানদের হয়রানি করছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা জাফর শেখের বোড়াশী মৌজার একাধিক দাগের প্রায় ২৮ শতাংশ সম্পত্তি কৌশলে দখল করে নেয় স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বোড়াশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এম মনির আহমেদ ননী স্থানীয় গণ্যমান্য লোকদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সম্পত্তি উদ্ধারে কয়েক দফা সালিসি বৈঠক করেছেন। কিন্তু দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় ওই সালিসের সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেয়নি।
বাঁশবাড়ি গ্রামের সাবেক সেনা সদস্য স্বপন শেখ বলেন, ২০১৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা জাফর শেখ মৃত্যুরণ করেন। তখন তিনি তার ওয়ারিশ হিসেবে ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রেখে যান। তিনি তার জীবদ্দশায় গোপালগঞ্জ কালেক্টরেটের অফিস সহায়ক ছিলেন। চাকরির সুবাদে পরিবার নিয়ে তিনি গোপালগঞ্জ শহরের মোহম্মাদপাড়া এলাকায় বসবাস করতেন। ফলে তিনি তার গ্রামের বাড়িতে পৈতৃক সম্পত্তির খোঁজখবর কম রাখতেন। এ সুযোগে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলটি জাল দলিল করে এবং অন্যান্য কৌশলে এসব সম্পত্তি দখল করে নেয়।
মুক্তিযোদ্ধার জাফর শেখের সন্তান জাকির শেখ বলেন, ‘আমার বাবার মৃত্যুর পর পৈতৃক সম্পত্তি উদ্ধারে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকার গণ্যমান্য লোকজন ও প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি। সাবেক ইউপি মেম্বার লিচু শেখের মদদে স্থানীয় প্রভাবশালী মিলন শেখ, মিন্টু শেখ, লিপি বেগম ও রাশিদা বেগম গং জোর করে আমাদের সম্পত্তি ভোগদখল করছে। আমরা সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে বললে তারা আমাদের নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। আমার বাবা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। অথচ আমরা পৈতৃক সম্পত্তি ভোগদখল করতে পারছি না। বর্তমানে আমরা চরম আর্থিক অনটনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। আমরা যাতে পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পেতে পারি, সে ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
বোড়াশী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার লিচু শেখ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা জাফর শেখের সঙ্গে তার ভাইদের বিরোধ রয়েছে। এখানে আমার মদদ দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। বোড়াশী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নাসিমুল গণি বলেন, শুনেছি মুক্তিযোদ্ধা জাফর শেখের কিছু জমি তার শরিকরা ভোগ দখল করছে। তার সন্তানরা যাতে তাদের পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পায় এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে বলে আমি মনে করি। মুক্তিযোদ্ধা সাখায়েত মোল্লা বলেন, জাফর শেখ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা এলাকায় সম্মুখ সমরে অংশ নিয়েছেন। তার পৈতৃক সম্পত্তি বেদখল হওয়ার ঘটনায় আমরা মুক্তিযোদ্ধারা খুবই মর্মাহত। আমাদের দাবি, প্রশাসন দ্রুত মুক্তিযোদ্ধার বেদখল হওয়া সম্পত্তি উদ্ধারে ব্যবস্থা নেবে।
পিডিএস/মীর