বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

  ২২ জানুয়ারি, ২০২৩

বেনাপোলে হবে হাসপাতাল, জমি চেয়েছে পৌরসভা 

বেনাপোলে একটি আধুনিক মানের হাসপাতাল নির্মাণে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে জমি চেয়েছে বেনাপোল পৌরসভা। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যারা জমি দান করতে আগ্রহী তাদের পৌরসভার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। সেই অনুরোধে অনেকে সাড়াও দিয়েছেন। তবে স্থানীয় প্রশাসন সেগুলো যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করবেন বলে জানা গেছে।

আরো জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালনায় আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট-২-এর আওতায় বেনাপোল পৌরসভার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারস্বরূপ একটি আধুনিক মানের হাসপাতাল নির্মিত হবে।

এ হাসপাতালের জন্য ছয়তলার একটি অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবন নির্মাণের জন্য রাস্তার পাশে প্রায় বর্গাকৃতির কমপক্ষে ১৫ শতাংশ জায়গা প্রয়োজন। জমিটি অবশ্যই কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বেনাপোল তথা শার্শাবাসীর স্বার্থে হাসপাতালের জন্য তার নিজ অথবা কোনো আত্মীয়ের নামে দান করতে পারবেন।

এলাকার লোকজন বলছেন, বেনাপোলের আশপাশে সরকারি জমি রয়েছে অনেক। কিন্তু সেগুলো দখল করে অনেকে ভোগ-দখল করছেন। কেউ কেউ আদালতে মামলা করে নিজের আয়ত্তে রেখেছেন সরকারি জমি। জমি না পেয়ে অবশেষে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে হাসপাতালের জন্য জমি সাধারণ মানুষের কাছে চাওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বেনাপোল পৌরসভায় ১ লাখ ৩০ হাজার এবং এ থানার আওতায় আরো তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে অন্তত আড়াই লাখ মানুষের বসবাসের জন্য স্বাধীনতার ৫২ বছরেও গড়ে ওঠেনি সরকারিভাবে কোনো হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্র। বেসরকারিভাবে যে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো আছে, তাতে নেই পর্যাপ্ত কোনো ডাক্তারের ব্যবস্থা। সপ্তাহে এক-দুদিন সেখানে রোগী দেখতে ডাক্তার আসে দূর-দূরান্ত থেকে। অপারেশন করতেও ডাক্তার আনতে হয় যশোর ও সাতক্ষীরা থেকে।

সীমান্তঘেঁষা এ বন্দরের মানুষ নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। দক্ষিণাঞ্চলে রাজস্ব আদায়ের প্রাণকেন্দ্র বেনাপোল বন্দর। প্রতি বছর এ বন্দর থেকে আট হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলেও এখানে এখনো হাসপাতাল গড়ে ওঠেনি। স্থলবন্দর বেনাপোলে চাকরি ব্যবসাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ রয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করেন বন্দরে। জরুরি কোনো দুর্ঘটনায় কোনো শ্রমিক আহত হলে বা কোনো প্রসূতির জরুরি ডেলিভারির প্রয়োজন হলে তাকে বেনাপোল থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হয়। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে যশোর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করাতে হয়। ৩৮ কিলোমিটার যাওয়ার সময় অনেকে পথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ নিয়ে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে চরম ক্ষোভ। তারা বলছেন, কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ এখান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করলেও এখানে কাস্টমস ও বন্দরের কয়েক হাজার শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের জন্য কিছুই করেননি। অথচ এই বন্দর থেকে আয় করে অন্য বন্দরের উন্নয়ন করছেন।

বেনাপোল পৌরসভার প্রশাসক ও শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নারায়ণ চন্দ্র পাল এ ব্যাপারে বলেন, এরই মধ্যে কয়েকজন যোগাযোগ করেছেন। জমির বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আশা করছি হাসপাতালের জন্য জমি পাওয়া যাবে। আমরা সবার সঙ্গে বসে দ্রুত বিষয়টি চূড়ান্ত করে ফেলব।

এদিকে মা ও শিশুদের সেবা নিশ্চিত করতে সরকার ২০১৩ সালে যশোরের বেনাপোল বন্দরের তালশারি ও শার্শা উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের গোড়পাড়া বাজারে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ শয্যার মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র দুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালে নির্মাণকাজ শেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। হস্তান্তরের ৭ বছর অতিবাহিত হলেও সেখানে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এই দুই এলাকার মা ও শিশুরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের টানাপড়নের কারণে এর কার্যক্রম শুরু হতে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটির উদ্বোধন এবং কার্যক্রম চালু হয় এমন তোড়জোরে বছর ৫ আগে, এখানে ২-৪টি চেয়ার-টেবিল ও কয়েকটি রোগীর বেড আনা হয়। সেগুলোও এখন নষ্ট হওয়ার পথে। এ কেন্দ্রের জন্য এখনো কোনো জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সরঞ্জাম ব্যবহার না করায় অবস্থা এমন হয়েছে ৫ বছর আগের নির্মাণ করা মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের দরজা-জানালাসহ ভবন দুটির রংসহ অন্য্য জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে পড়ছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বেনাপোল,হাসপাতাল,পৌরসভা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close