এ এফ এম মমতাজুর রহমান, আদমদীঘি (বগুড়া)

  ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২

সান্তাহার মুক্ত দিবস বুধবার

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

১৪ ডিসেম্বর বগুড়ার সান্তাহার রেল জংশন শহর হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিকের আক্রমণে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর কবল থেকে অবরুদ্ধ সান্তাহার জংশন শহরকে মুক্ত করেন। এই দিনটিকে ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্লাব সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালে এই সান্তাহার জংশন ছিল অবাঙালি অধ্যুষিত এলাকা। তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমর্থক ছিল এবং সেনাদের সঙ্গে মিলে স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছিল।

মুক্তিযোদ্ধা কালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আজমল হোসেন এবং এল কে আবুল বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধে সান্তাহার জংশন শহরের ইতিহাস গৌরবময়। দেশের বৃহৎ অবাঙালি (বিহারি) অধ্যুষিত শহর হওয়ায় এখানে পাক হানাদাররা মূল ঘাঁটি স্থাপন করে। এ শহর থেকে পাকিস্তানি সেনারা নিয়ন্ত্রণ করতো গোটা উত্তরাঞ্চল। এখানকার পাক হানাদারদের নির্মম অত্যাচারের পাশাপাশি অবাঙালিদের (বিহারি) অত্যাচার ছিল অবর্ণনীয়। শহরে দীর্ঘ ৯ মাস কোনো বাঙালিকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বাঙালিদের দেখামাত্রই চালানো হতো নির্মম নির্যাতন, করা হতো হত্যা। প্রত্যেক বিহারি ছিল অস্ত্রে সজ্জিত। তারা পাশের গ্রামগুলোতে লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করত। বাঙালিরা ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের গৌরবান্বিত দিনগুলো উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো আজও জল জল করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো সান্তাহার শহরের জনতাও জ্বলে উঠেছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম থেকেই শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ।

সান্তাহার রেলওয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশিদ বলেন, সান্তাহার শহরের বৃহত্তর এলাকাজুড়ে চালানো হয় গেরিলা পদ্ধতিতে আক্রমণ। ১০ ডিসেম্বর থেকে কমান্ডার ফজলুল হক, নজরুল ইসলাম, মুনছুর আলী, এল কে আবুল হোসেনসহ অন্যান্য কমান্ডারদের নেতৃত্বে প্রায় ৪ শতাধিক গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা সান্তাহারের দক্ষিণ, উত্তর ও পূর্বদিকে অবস্থান নিয়ে খণ্ড খণ্ডভাবে সান্তাহার শহরে অবস্থিত পাক হানাদারদের ওপর হামলা চালিয়ে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিকের রেললাইন উপড়ে দিয়ে শত্রুদের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ১৪ ডিসেম্বর। তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমণের মুখে এই দিন পাক হানাদাররা সান্তাহার শহর ছেড়ে নওগাঁ হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর এই দিনে সান্তাহারে বিজয়ের পতাকা উড়ায়।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মুক্তিযুদ্ধ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close