পিরোজপুর প্রতিনিধি

  ০৮ ডিসেম্বর, ২০২২

আজ পিরোজপুর মুক্ত দিবস

পিরোজপুর হানাদার শত্রু মুক্ত দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে (৮ ডিসেম্বর) পিরোজপুরে পাকহানাদার, রাজাকার, আলশামস ও আলবদর মুক্ত হয়। এ দিনে ঘরে ঘরে উড়েছিল লাল-সবুজের বিজয় পতাকা।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুর ছিল নবম সেক্টরের অধীন, সুন্দরবন সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিনের কমান্ডের আওতায়।

১৯৭১ সালের ৩ মে পিরোজপুরে প্রথম পশ্চিম পাক দখলদার বাহিনী প্রবেশ করে। বরিশাল থেকে গানবোটে চড়ে ৩২ পাঞ্জাব ও ২২ বালুচের ২ প্লাটুন সৈন্য শহরের প্রবেশদ্বার হুলারহাট নৌবন্দর থেকে শহরে প্রবেশ করে, পথে প্রথমেই তারা মাছিমপুর ও কৃষ্ণনগর গ্রামে শুরু করে নারকীয় গণহত্যা। এ দিনেই তারা শতাধিক নিরাপরাধ নারী-পুরুষ শিশুকে হত্যা করে। জ্বালিয়ে দেয় শহরের ও শহরতলীর শত শত বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, খাদ্যগুদাম। ৮ মাস স্থানীয় শান্তি কমিটির নেতা ও রাজাকারদের সহায়তায় বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা, সংখ্যালঘু সাধারণ মানুষের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়।

৫ মে পিরোজপুরের বলেশ্বর নদীর বধ্যভূমিতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তখনকার মহাকুমা প্রশাসক মো. আবদুর রাজ্জাক, ১ম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল বারী মো. মিজানুর রহমান, মহাকুমা পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমান আহমেদসহ সরকারি কর্মকর্তাদের।

এভাবে ৮ ডিসেম্বর পালিয়ে যাওয়ার দিন পর্যন্ত বর্বর হায়েনারা ৩০ সহস্রাধিক মুক্তিকামী নারী-পুরুষ-শিশুকে নির্বিচারে হত্যা করে।

পিরোজপুর মহাকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি ও এখানে প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনকারী ছাত্রনেতা ওমর ফারুক, ফজলুল হক খোকন, বিধান মন্টু, সেলিম, যশোর শিক্ষা বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ১ম স্থান অধিকারকারী গণপতি হালদার, জিয়াউজ্জামান, গৃহবধূ ভাগিরথী সাহাসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে পৈশাচিকভাবে বলেশ্বর খেয়াঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে হত্যা করে।

পিরোজপুরকে হানাদার মুক্ত করতে সুন্দরবনের সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিনের নির্দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ৭ ডিসেম্বর রাতে সামছুল হক খানের নেতৃত্বে পাড়েরহাটের দিক থেকে এবং হাবিবুর রহমান সিকদারের নেতৃত্বে আরেকটি শক্তিশালী দল নাজিরপুরের পথ ধরে শহরের দিকে দ্রুত এগিয়ে আসার খরব পেয়ে দখলদার বাহিনী পিরোজপুর ছেড়ে গানবোটে চড়ে বরিশালের দিকে পালিয়ে যায়। এর আগে স্বরূপকাঠী পেয়ারা বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের গড়ে তোলা দুর্গে পাকবাহিনী আক্রমণ করলে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণে পাকবাহিনী পর্যুদস্ত হতে থাকে। শেষে ৮ ডিসেম্বর পিরোজপুর ছেড়ে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। যাবার দিন তারা ন্যাশনাল ব্যাংক লুট করে সেখানে গচ্ছিত টাকা এবং স্বর্ণ নিয়ে যায়।

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পিরোজপুর মুক্ত দিবস,৮ ডিসেম্বর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close