মিজান রহমান ও বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার থেকে

  ০৭ ডিসেম্বর, ২০২২

উৎসবের আমেজ পর্যটন নগরীতে

প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে প্রস্তুত কক্সবাজারবাসী

প্রায় ৬ বছর পর আজ (৭ ডিসেম্বর) এক দিনের সফরে কক্সবাজার আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রথমে ইনানী বিচে নৌবাহিনীর একটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। পরে কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন। এই জনসভাকে কেন্দ্র করে পাল্টে গেছে সমুদ্র নগরীর চিত্র। বিভিন্নভাবে সাজানো হয়েছে নগরকে। উৎসবের আমেজ শহরের প্রতিটি প্রান্তে।

কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম মাঠের জনসভায় স্মরণকালের গণজমায়েত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে তাই সাজসাজ রব পর্যটন শহরের প্রতিটি এলাকায়। এরই মধ্যে নেতাকর্মীদের ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে জনসভাস্থলের আশপাশসহ শহরের অলিগলি।

সমাবেশকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে চায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, কক্সবাজার শহর ও জেলার প্রত্যেক উপজেলা ছাড়াও আশপাশের উপজেলা থেকে সমাবেশে যোগ দেবেন নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। সব মিলিয়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের জনসভাস্থলের মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আশপাশে সড়কও ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে শহরের কলাতলীর মোড় পর্যন্ত পাঁচণ্ডছয় কিলোমিটার সড়কে তোরণ নির্মাণের ধুম পড়েছে। এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক তোরণ তৈরি হয়েছে। শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ভেতরে জনসভায় বিশাল মঞ্চ তৈরির কাজও চলছে। জনসভা সফল করতে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর সফর নিরাপদ করতে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারবাসীকে বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্প উপহার দেবেন। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম অঞ্চলের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছেন। আর সে অনুযায়ী কক্সবাজারে ভৌত কাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এছাড়া অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে।

এ সফরে প্রধানমন্ত্রী ২৮টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। ১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এরই মধ্যে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। একই সঙ্গে ৫৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।

শহর ও জনসভাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে সংস্কার করা হয়েছে রাস্তাঘাট। বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, দেয়াল লিখন, আলোকসজ্জা ও তোরণ নির্মাণসহ সাজসজ্জার কাজ চলছে পুরোদমে। চলছে মাইকিংসহ প্রচার-প্রচারণাও। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উন্মুখ হয়ে আছেন কক্সবাজারের সর্বস্তরের মানুষ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন ও জনসমাবেশকে ঘিরে নিশ্চিত নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে প্রশাসন। জনসভাস্থলে ৫ স্তরের ও শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা কোনো রকম ব্যর্থতায় পুলিশের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বের বিশাল সমুদ্র পাড়ে আওয়ামী লীগের এ সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে। কক্সবাজারের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। সমাবেশে মানুষের উপস্থিতিই প্রমাণ দেবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কক্সবাজারবাসীর ভালবাসা।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহে যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য শেখ কামাল স্টেডিয়ামে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ঠিক করা হয়েছে। জনসভায় আসা সব কর্মীর জন্য ওয়াসরুম থেকে শুরু করে খাওয়ার পানি পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রেখেছি। জনসভায় কেউ অসুস্থ হলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এজন্য আমরা ৫-৭টি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রেখেছি।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম (প্রশাসন) বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমনের ৩ দিন আগে থেকে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এরই মধ্যে পুরো শহরে পুলিশ মোতায়েন করেছি। সভাস্থলের থেকে ৭-৮ কিলোমিটার দূরে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. নুরুল আবছার জানান, জেলাবাসীর প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। মেগা প্রকল্পের কারণে এ জেলা এখন আন্তর্জাতিক একটি পয়েন্ট। মহেশখালীতে যে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এটা বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজার জেলা শহরের সঙ্গে মহেশখালীর যোগাযোগ সহজ হবে।

তিনি সমুদ্র বিজয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, সমুদ্র বিজয়ে আমাদের সামুদ্রিক নীল অর্থনীতি বিশাল হাতছানি দিচ্ছে। এ অর্থনীতির উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ঘোষণা বা পরিকল্পনা ৭ ডিসেম্বর জানাবেন। একই সঙ্গে সম্ভাবনার পর্যটন শিল্পের বিকাশে কক্সবাজারে একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারসহ বিনোদন কেন্দ্র জরুরি হয়ে পড়েছে। যেখানে থাকবে আন্তর্জাতিকমানের থিয়েটার প্রদর্শনীসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকের বিনোদনের নানা মাধ্যম। এতে পর্যটন শহরের গুরুত্ব বাড়বে আরো অনেক বেশি।

জানা গেছে, জেলায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে এগিয়ে চলছে ৭৭টি মেগা প্রকল্পের কাজ। উন্নয়নের এ মহাযজ্ঞ চলমান অবস্থায় আগামীকাল বুধবার কক্সবাজার সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারের ইনানীতে ৩০টি দেশের নৌ বাহিনীর অংশগ্রহণে একটি মহড়া উদ্বোধন করবেন। বিকালে জেলা সদরে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি।

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রধানমন্ত্রী,কক্সবাজার,পর্যটন নগরী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close