কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২২

স্বাধীনতার উষালগ্নে মুক্ত হয় কমলগঞ্জ

কমলগঞ্জের শমসেরনগর বদ্ধভূমি

৫ ডিসেম্বর, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ মুক্ত দিবস। স্বাধীনতার উষালগ্নে ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে কমলগঞ্জের দখলদারিত্ব ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই দিনে কমলগঞ্জের মুক্তিপাগল বাঙালি উড়িয়ে দেয় স্বাধীনতার পতাকা। দিবসটি উপলক্ষে রোববার (৪ ডিসেম্বর) কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল মুনিম তরফদার ও সাবেক ডেপুটি কমান্ডার জয়নাল আাবেদীন জানান, প্রকৃতপক্ষে ৫ ডিসেম্বরই কমলগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয়। পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে কমলগঞ্জ উপজেলায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সর্ব দলীয় সংগ্রাম পরিষদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকেই এখানে শুরু হয় সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রস্তুতি। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অনুগত ৬০ জনের একটি দল তৈরি করে উপজেলার শমশেরনগর বিমান ঘাঁটিতে ট্রেনিংয়ের কাজ চলতে থাকে। ১০ মার্চ ক্যাপ্টেন গোলাম রসুলের নেতৃত্বে এক দল পাক সেনা মৌলভীবাজারে অবস্থান নেয়। ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে তৎকালীন ছাত্রনেতা নারায়ণ পাল ও আব্দুর রহিম পাকিস্তানী পতাকা পোড়ানোর দায়ে গ্রেপ্তার হন। পরে অবশ্য জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনালগ্নে নকশাল পন্থিদের নির্মূল করার অজুহাতে মেজর খালেদ মোশারফকে কমলগঞ্জে পাঠানো হয়। তিনি ছিলেন বাঙালি সেনা কর্মকর্তা। ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু হলে তিনি পাক বাহিনীর সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে জনতার কাতারে সামিল হন।

কমলগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তিনটি ঘটনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হচ্ছে পাত্রখোলা, ধলাই ও ভানুগাছের যুদ্ধ। ন্যাপ নেতা মফিজ আলী, ক্যাপ্টেন মোজাফফর আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা এম. এ. গফুর, ময়না মিয়া, ক্যাপ্টেন সাজ্জাদুর রহমানের নেতৃত্বে কমলগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা লড়েছেন। এখানকার বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানী, বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান, মেজর খালেদ মোশাররফ, ব্রিগেডিয়ার আমিন আহম্মদ ও মেজর জিয়াউর রহমান। এ উপজেলার বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান, ল্যান্স নায়েক জিল্লুর রহমান, সিপাহী মিজানুর রহমান, সিপাহী আব্দুর রশিদ, সিপাহী শাহাজাহান মিয়াসহ নাম না জানা অনেকেই।

মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ৩ ডিসেম্বর শমশেরনগর এলাকা শক্রমুক্ত করে ৫ ডিসেম্বরে ভানুগাছ এলাকায় মুক্তি বাহিনী ও পাক বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধের পর কমলগঞ্জ সদর থেকে পাক হানাদার পিছু হটে মৌলভীবাজারের দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মুক্তিযোদ্ধারা কমলগঞ্জের মাটিতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন ৫ ডিসেম্বর।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বদ্ধভূমি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close