আব্দুল আলীম, নারায়ণগঞ্জ

  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২২

পাসপোর্ট প্রার্থীদের চরম ভোগান্তি

নারায়ণগঞ্জে পাসপোর্ট মেলে না ৩ মাসেও

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জের ভুইগড় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যেন সোনার হরিণ। এক সপ্তাহের জরুরি পাসপোর্ট ছয় মাসেও মিলছে না। এতে পাসপোর্ট প্রার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে বিদেশযাত্রা। চিকিৎসা নিতেও নেমে এসেছে দুর্বিসহ অবস্থা।

নতুন পাসপোর্টের জন্য নারায়ণগঞ্জের ভুইগড় পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করেছেন বন্দর উপজেলার বাসিন্দা, কবির হোসেন। গত বছরের সাধারণ পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন তিনি, কিন্তু দীর্ঘ ছয় মাসেও পাসপোর্ট হাতে না পেয়ে বেকায়দায় পড়ে গেছেন তিনি। সাধারণ পাসপোর্ট ২১ কার্যদিবসের মধ্যে প্রদান করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এখনো মিলছে না পাসপোর্ট। গেল ছয় মাস আগে আবেদন করেও পাসপোর্ট পাননি ইউছুফ। অক্টোবরে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছিলেন সোনারগাঁ উপজেলার বাসিন্দা তালেবুর রহমান। এক বছর পার হলেও পাসপোর্টের দেখা পাননি। পাসপোর্ট অফিসে কথা হলে তালেবুর রহমান বলেন, এক বছরেও পাসপোর্ট পাইনি। যোগাযোগ করতে গেলে কর্মকর্তারা বলেন, প্রিন্টিং প্রসেসিং এ আছে। শিগগিরই আসবে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তালেবুর রহমান বলেন, এদিকে পাসপোর্টের জন্য দুবাইয়ের ভিসা দিতে পারছি না। এর আগে একটি ভিসা নিয়েও পাসপোর্ট না পেয়ে ফেরত দিতে হয়েছে।

সৌদি আরব থেকে ছয় মাসের জন্য দেশে এসেছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জের লুৎফর। তিনি পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করেছিলেন গত জুলাই শেষের দিকে। গত নভেম্বরের শেষের দিকে এসেও তিনি পাসপোর্ট পেলেন না। লুৎফর বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনের কোনো খবর নেই। এদিকে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। দালালকে ৬ হাজার ৮০০ টাকা দিয়ে পাসপোর্ট আবেদন করানোর পরও পাসপোর্ট পাচ্ছি না।

আড়াইহাজার উপজেলার বাসিন্দা লোকমানও পাসপোর্ট নবায়ন করতে আবেদন করেছেন সাড়ে তিন মাস আগে। কিন্তু এ পাসপোর্টের দেখা কিছুতেই যেন মিলছে না। জরুরি পাসপোর্টের আবেদন করে দেড় মাস পার হলেও পাসপোর্ট পাননি রূপগঞ্জের হামিদ।

নারায়ণগঞ্জে ভুইগড় পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন জমা পড়ছে কয়েকশ পাসপোর্টের আবেদন। আবেদনের বিপরীতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পাসপোর্ট আসছে অতিনগন্য। নিয়ম অনুযায়ী, জরুরি পাসপোর্ট সাত কর্মদিবসের মধ্যে পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তব চিত্র তার উল্টো। কয়েক মাস ধরে পাসপোর্ট অফিসের এমন ধীরগতির কারণে আবেদনকারীরা বিরক্ত। সংশ্লিষ্টরা জানান, বই সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় প্রিন্টিং শাখা থেকে পাসপোর্ট পেতে দেরি হওয়াতে এখন নির্দিষ্ট সময়ে পাসপোর্ট মিলছে না।

অবশ্য পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের এ অজুহাতের সুযোগ নিচ্ছেন একশ্রেণির দালালচক্র। পাসপোর্ট ভোগান্তির খবর প্রচারের পর দালালচক্র বেশি দামে কম সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট নিয়ে দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করলেও তারা কিছুই করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

তারা জানান, কম সময়ের মধ্যে দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট করালেও দালালরা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ঠিকই। পরে নিজেদের পাসপোর্ট আনতে হচ্ছে দীর্ঘ সময় পর।

আবেদনকারীরা জানান, দিন দিন পাসপোর্ট ডিজিটাল হচ্ছে। ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে। কিন্তু মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) পেতে ভোগান্তি কোনোভাবে কমছে না। পাসপোর্ট পেতে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে গ্রাহকদের।

নারায়ণগঞ্জের ভুইগড় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহাকারী পরিচালক জামাল হোসেন বলেন, পাসপোর্টের আবেদন পাওয়ার পর যথাযথ প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত ঢাকায় পাঠানো হয়। কিন্তু ঢাকা থেকে পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়ে তা নারায়ণগঞ্জে আসতে একটু দেরি হচ্ছে। যাদের বেশি জরুরি দরকার, চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে বিমানের টিকিট কেটেছেন তাদের জরুরি ভিত্তিতে এনে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

জানা যায়, আগে যে সংখ্যক পাসপোর্ট প্রিন্ট হতো, বর্তমানে তার সংখ্যা কমেছে। নির্দিষ্ট সময়ে পাসপোর্ট না পাওয়ায় প্রায়ই আবেদনকারীদের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জের ভুইগড় অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাসপোর্ট পেতে সময়ক্ষেপণ হওয়াতে এখন আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে আবেদনকারীর সংখ্যা। আগে দৈনিক ৪০০ এর অধিক পাসপোর্টের আবেদন পড়ত। বর্তমানে ২০০ থেকে ২৫০ এর বেশি পাসপোর্টের আবেদন পড়ছে না। এদিকে ২০০ থেকে ২৫০ আবেদন পড়লেও ঢাকা থেকে পাসপোর্ট আসছে দৈনিক ৫০ থেকে ৬০টা মাত্র।

নারায়ণগঞ্জের ভুইগড় পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক জামাল হোসেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন্দ্রিয় প্রিন্টিং শাখায় মেশিন নষ্ট হওয়াতে বই আসছে না। তাই আগের চেয়ে আবেদনকারীর সংখ্যা কমেছে। এ সমস্যা বেশি দিন থাকবে না। তবে জরুরিভিত্তিতে অনেককে পাসপোর্ট পাওয়ার বিষয়ে আমি সহযোগিতা করছি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পাসপোর্ট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close