খুলনা ব্যুরো

  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২২

খুলনায় ট্রিপল মার্ডার : সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী দিহিদার, তার স্ত্রী মঞ্জু বেগম ও আওয়ামী লীগ কর্মী শুকুর শেখকে হত্যার দায়ে ওই ইউনিয়েনের বহিষ্কৃত ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ফকিরসহ ১৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক বছর করে কারাদ- দেওয়া হয়েছে।

রবিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নজরুল ইসলাম হাওলাদার এ রায় ঘোষণা করেন। সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলো- আবুয়াল ফকির, মো. হুমায়ুন হাওলাদার, মিল্টন খান, মো. মফিজ খান, মো. ফারুক, মো. আবুল হোসেন শেখ, মো. মোদাচ্ছের শেখ, সুনীল দাস, বিশ্বনাথ ওরফে বিশ্ব প্রমাণিক, মো. লিয়ন শিকদার, সুব্রত কুমার সাহা ওরফে পল্টু (পলাতক), মেহেদী ওরফে রুবেল ফকির ও মো. মহি মোল্লা।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদের বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ফকির ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী দিহিদারের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সেই বিরোধের জের ধরে এ ট্রিপল হত্যাকাণ্ড ঘটে। ওই সময় পুলিশ ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ফকিরের লাইসেন্স করা একটি বিদেশি শটগান, একটি রিভলবার, একটি দেশীয় ওয়ান শুটার গান, একটি কুড়াল ও তিনটি গুলি জব্দ করে।

আদালত ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর মোড়েলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ফকিরের নেতৃত্বে তার লোকজন দৈবজ্ঞহাটি বাজার থেকে দুপুর আড়াইটার দিকে যুবলীগ নেতা শুকুর শেখকে সেলিমাবাদ ডিগ্রি কলেজ মাঠে গুলি করে ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে নিয়ে ফেলে রাখে।

বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী দিহিদারের বাড়িতে আক্রমণ করা হয়। হত্যাকারীদের অবস্থান বুঝে তিনি তার ঘরের পাটাতনে পালান। আসামিরা ঘরের চালার টিন কেটে পাটাতনে প্রবেশ করে। ওখান থেকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে, পিটিয়ে টেনে-হিঁচড়ে তাকে ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে নিয়ে যান। পরে ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে নিয়ে যান। পরে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে নিয়ে শুকুর শেখ ও আনসার আলী দিহিদারকে বোরকা পরিয়ে নির্যাতন করেন। পরে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে। একাধিক গুলি ও মারধরে ঘটনাস্থলে শুকুর শেখ মারা যান এবং বাগেরহাট থেকে খুলনা নেওয়ার পথে মারা যান আনসার আলী দিহিদার।

ওই দিন আনসার আলী দিহিদারের স্ত্রী মঞ্জু বেগম ও শ্রমিক নেতা বাবলু শেখকে মারধর করে সন্ত্রাসীরা। মারধরে মঞ্জু বেগমের দুই পা ও বুকের হাড় ভেঙে যায়। দীর্ঘ ২২ মাস বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২০ সালের ৩০ জুলাই রাত ১২টার দিকে মারা যান মঞ্জু বেগম।

২০১৮ সালে আনসার ও শুকুর মৃত্যুর পর ৪ অক্টোবর রাতে মোড়েলগঞ্জ থানায় নিহত শুকুর শেখের ভাই শেখ ফারুক হোসেন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা বাদী হয়ে আরো একটি মামলা করেন। ২০১৯ সালের ৪ জুন পুলিশ ৫৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। জানা গেছে, চেয়ারম্যান ফকির শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২৩টি হত্যা মামলাসহ ৭১টি মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে জলদস্যুতার মামলাও রয়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
খুলনা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close